সিরাজগঞ্জের বানবাসি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা এবার কোরবানি দিতে পারবেন না

ফারুক আহমেদ, সিরাজগঞ্জ ।।
বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০, ৮:০৭ অপরাহ্ন

করানোর ও বন্যায় আগ্রাসী থাবায় এবার সিরাজগঞ্জের  অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্তশালীরা কোরবানি দিতে পারবে না অনেকে। করনোর কারণে ছোট ব্যবসায়ী, বেসরকারী কোম্পানী থেকে ছাঁটায় ও বেতন বন্ধ হয়ে আছে অনেকের। প্রায় কয়েক মাস যেটুকু পূজিত ছিল তাও শেষের পথে।

এমনি অবস্থায় কুরবানির জন্য বড় অংকের টাকা খরচ করে কোরবানি দিতে তারা অপারক। বলছেন আগে বেঁচে থাকা তারপর কোরবানি। এদিকে কোরবানির জন্য বসা হাট গুলোতে এসব কারণ থেকেই ক্রতার আনাগোনা কম দেখা যাচ্ছে। আর মাত্র ১ দিন পরেই কোরবানির ঈদ। আর ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর বেশ আগে থেকেই মানুষ তাদের কোরবানির বাজেট করে রাখতেন।

সামর্থ অনুযায়ী কেউ একাই গরু,খাসি, ভেড়া কোরবানির দেন। আবার অনেকেই ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশেও করোনার ও বন্যার আগ্রাসী থাবায় মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে। কিছুদিন আগেও বন্ধ ছিল অফিস, মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। করোনার কারণে সব ক্ষেত্রের অবস্থায় নাজুক। প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় না থাকায় চাকরিচ্যুুত হয়েছে অনেকে। আবার অনেকের চাকরি থাকলেও বেতন পাচ্ছেন না।

এই অবস্থায় সন্তানদের স্কুলের বেতন বাসাভাড়া,সংসার খরচ চালাতে গিয়ে পুঁজি শেষ করে ফেলেছেন অনেকে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার। আবার অনেকে সংক্রমণের ভয়ে কুরবানি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন এবার। সংসার জীবন শুরু করার পর থেকেই প্রতিবছর কোরবানিতে একটা গরু ও একটা খাসি কোরবানি দিতেন সলঙ্গার আমশড়া গ্রামের কলিমুদ্দিন।  কিন্তু এবার তার দোকানে গত কয়েক মাস হলো কোন বেচাকেনা নাই । উল্টো দোকানের পুঁজি ভেঙ্গে খেলাম উপরন্তু কোম্পাদের মাল ফেরত দিতে হচ্ছে।

যা বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়েছি। নতুন করে মাল কেনা হয়নি। কোরবানি কেমন করে দেবো। নিজেরাই করোনার ও বন্যার জন্য কোরবানি হয়ে গেছেন বলে জানান। সলঙ্গার আলামিন আকন্দ। চাকরি করেন এনজিওতে তিনমাস হলো কিস্তি টাকাও বন্ধ তাদেরও বেতন বন্ধ। বললেন, পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই অসুবিধার মধ্যে আছেন।

প্রতিবছর দুই তিনমাস আগে থেকেই বেতন থেকে টাকা বের করে জমিয়ে রাখতেন। সেই টাকার সাথে আরও কিছু যোগ করে ভাগে কুরবানির দিতেন। কিন্তু এবার সাহায্য নেয়ার মত অবস্থা। কত মানুষ এমনও ছিল যারা ১ – ৭ জন মিলে ভাগে  কোরবানি করতো  সেখানে অনেক পরিবার কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য হারানোর অবস্থা হয়েছে । আয় নাই কিন্তু খরচ বেশি হচ্ছে। বললেন, কেউ কোরবানির মাংস দিয়ে গেলে খাব নয়তো খাব না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৮ হাজার ৩৩০ টি  খামারে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তত করা হয়েছিল ৯৫ হাজার ৮০০ শত ৭৫ টি। আর এ বছর প্রস্তত করা হয়েছে ৮৮ হাজার ৫০০শত ১৫টি।প্রস্ততকৃত পশুর সংখা কমেছে ৭ হাজার ৩০০ শত ৬০টি। তবে গত বছর কোরবানির জন্য ৯৫ হাজার ৩০০ শত পশুর চাহিদা থাকলেও এ বছর তা ২ হাজার কমে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩ হাজার ৪০০ শত ২০টি। আর এ বছর চাহিদার বিপরীতে প্রস্ততকৃত পশু বেশি আছে ১৫ হাজার ২৭৭টি।

ব্র্যাক, ডেটা সেন্স ও উন্নয়ন সমন্বয় গত কয়েক মাসের সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেখানে বলা হয়,চলমান করোনাভাইরাস ও বানবাসি সিরাজগঞ্জের মানুষের পারিবারিক উপার্জন গড়ে ৮০ – ৮৫শতাংশ কমে গেছে। অর্থ্যাৎ, আগে যে পরিবার ১০০ টাকা আয় করত, এখন সেখানে আয় হচ্ছে মাত্র ২৬ টাকা। ১৪ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন কিংবা ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন বলেও উল্লেখ করা হয় ও-ই গবেষণায়। আর সসব কারণ থেকেই আসন্ন ঈদুল আযহায় সারা দেশের মত সিরাজগঞ্জের বিরাট একটা অংশ কোরবানি দিবেন না বা দিতে পারবেন না।

তাছাড়া তাদের কারো কারো হৃদয়ে করোনায় স্বজন হারানোর বেদনার সাথে যুক্ত হয়েছে অব্যক্ত বেদনা। সলঙ্গা আমশড়া গ্রামের  ৬৫ বছরের হামজালা চাচা বলেন, আমার জনমেও এমন ঈদ দেখিনি,  নামাজ শেষে একজন আরেকজনের বাড়িতে যেতে পারিবে না। সরকারি সিন্ধান্ত মোতাবেক নিজ পাড়া মহল্লায়  মসজিদে ঈদের  নামাজ পড়তে হয়। 

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com