স্বামী-স্ত্রী
রাহাত
———————————————————–
স্বামী :
শুনছো না-কি গেলে কোথায়?
অফিস থেকে এলাম,
দশটা মিনিট হয়ে গেল
না চা, না জল পেলাম,
কর যে কী সারাটা দিন
স্টার জলসাই দেখো,
বরটা এসে বসে আছে
একটু খেয়াল রাখো।
স্ত্রী:
ঘুমোচ্ছিলাম বুঝলে সোনা
তেলটা দিয়ে নাকে,
ঘুম ভেঙে এই উঠে এলাম
মিষ্টি তোমার ডাকে,
বলতে পারো সারাটা দিন
এমনি বসে থাকি?
রাজ্যের সব ফেলে রেখে
স্টার জলসা দেখি?
সকাল বেলা বেরিয়ে যাও,
রাতে ফেরো ঘরে,
খোঁজ কি রাখো সারাদিনের
কাজ এত কে করে?
ভোর থেকে সেই উঠে কখন
শুরু যে হয় পালা,
ঘরে দুটো হনুমান
তাদের হাজার জ্বালা,
রান্না-বান্না, দোকান বাজার,
সবার আসা-যাওয়া,
পড়াশুনা হাজার ঝক্কি
মাথায় ওঠে খাওয়া,
এটা চাই, ওটা কোথায়?
সকলের ফরমাশ,
মানুষ বলে ভাবো আমায়?
খাটাও বারোমাস।
স্বামী :
কাজ তো তুমি একাই করো
আমি ঘুরে আসি,
সকাল বেলা বেরিয়ে পড়ি
পার্কে গিয়ে বসি,
আড্ডা মারি, Movie দেখি,
Lunch এ বিরিয়ানি,
মাসের শেষে গাছ নাড়িয়ে
টাকা ঘরে আনি,
ট্রেনে, বাসে বাদুর ঝোলা
তাতেই নাজেহাল,
ঘেমে নেয়ে ঘরে ফিরে
খাও বউ এর গাল।
স্ত্রী :
বউ কিছু বলতে গেলেই
হবেই তো মানহানি,
এই যদি মা বলতো
হয়ে যেত বানী।
স্বামী :
এই তো এবার পথে এসো,
আসল কথা বলো,
ভাবছো আমি বুঝি না কি?
কার ভাবনায় চলো?
স্ত্রী :
ভাবনা করার সময় কোথায়?
করি ঝি এর কাজ,
পান থেকে চুন খসে তো
পড়বে মাথায় বাজ,
মায়ের কথায় একটুতেই
জ্বালা ধরে যাবে,
বউ! ও তো পরের মেয়ে
তার কথা কে ভাবে।
স্বামী :
ভাবি না তো, বেশ ভাবি না,
কার জন্য খাটি?
বাদ দাওগে ভালো লাগে না
রোজ ঝগড়াঝাঁটি।
স্ত্রী :
ঝগড়া তো রোজ আমিই করি,
তুমি সাধু লোক,
বাজারে তো সুনাম আছে
আর কিছু না হোক।
অফিস আছে, আড্ডা আছে,
আরো আছে তাস,
হাজার একটা মেয়েবন্ধু,
আমার সর্বনাশ।
স্বামী :
হাজার একটা? হায় মালিক
একটাও নেই মোটে,
তোমার মতো এক পিস্ তো
আমার কপালে জোটে,
তার সাথে শাশুড়ী আর
হিড়িম্বা ঐ শালি,
হাড়ে আমার হলুদ দিলো
জীবন হলো কালি,
ও কি হলো কাঁদছো নাকি?
করেছিলাম joke,
আচ্ছা ছাড়ো ও সব কথা,
মোছো এবার চোখ।
মাইগ্ৰেনটা খুব বেড়েছে
জ্বালাচ্ছে খুব আজ,
সারাটা দিন তার মধ্যে
বড্ড ছিল কাজ।
স্ত্রী :
এ-মা আমি বুঝিনি গো,
দাঁড়াও ওষুধ আনি,
আজ যে তোমার ধরবে মাথা
কালকে রাতেই জানি,
কালকে যখন স্নান করলে
তখন কতো রাত,
অবেলায় ঢেলো না জল
সাইনাসের ধাত,
চা দেবো না কফি নেবে?
আদা দেবো চায়ে?
এই দেখো না পায়েলটা সেই
পড়েছি আজ পায়ে।
স্বামী :
আর সেজো না বুঝলে ম্যাডাম
একই আছো আজও,
আজও দেখে ক্যাবলা যে হই
যখন তুমি সাজো।
স্ত্রী :
ভাগো যত বাজে কথা
কলেজ দিনের মতো ,
হচ্ছে কি সব আদিখ্যেতা
বাড়ছে বয়স যত,
হ্যাঁ গো তোমার মনে পড়ে
সেই কবেকার কথা?
কত কত লিখতে চিঠি
গোছা গোছা পাতা,
লুকিয়ে লুকিয়ে স্কুলের পথে
সাইকেলে যাওয়া,
একসাথে পাশাপাশি
প্রথম ফুচকা খাওয়া
চাকরি পেয়ে প্রথম মাসে
যেদিন দিলে শাড়ি ,
কিংবা যখন প্রথমবার
গেলাম তোমার বাড়ি?
মোবাইল নেই, ফেসবুক নেই
তবুও হতো দেখা,
চিঠিগুলো তবে এখন
বড্ড লাগে ন্যাকা।
স্বামী :
প্রথম প্রথম লিখতে হয়
ওসব অনেক কিছু,
অকারণ চক্বর মারা
হাঁটা পিছু পিছু,
বোসেদের মলয়টা তো
তক্বে তক্বে ছিল,
ভয় হতো এই বুঝি
তোমায় তুলে নিলো,
তুমি ও ছিলে তেমনি ন্যাকা
করতে দাদা দাদা,
দেখতে তো ঐ ক্যাবলা গনেশ
নাম্বার ওয়ান হাঁদা।
স্ত্রী :
তুমিই বা কোন্ উত্তম কুমার?
তোমার কেস ও জানি,
শ্রাবন্তীকে লাগতো ভালো
হালে পাওনি পানি।
স্বামী :
ওই তো তুমি করতে শুধু
আর কি ছিল কাজ?
তোমার দাদার রটানো সব
বলে দিলাম আজ,
ঈর্ষা ছিল আমার ওপর
ভরতো তোমার কান,
সবই জানি বোনের ওপর
আছে কতই টান।
স্ত্রী :
সব কথাতেই তুমি দেখি
বাপের বাড়ি টানো,
ঘুরে ফিরে শুধুই আমার
বোন দাদাকে আনো,
তোমার তো ঐ একটাই বোন,
একলা একেশ্বরী,
একটুতে তার নাকি কান্না
আসবে বাপের বাড়ি,
জ্বালিয়ে খেলো গুষ্টিশুদ্ধ
যে যেখানে আছে,
হাড় জুড়োবে যেদিন আমি
যাবো যমের কাছে,
স্বামী :
অতটা সুখ নেই গো আমার
পুরোই কপাল পোড়া ,
এর চাইতে জুটতো বউ
বোবা, কালা, খোঁড়া,
রূপ না হয় কমই হতো
বুদ্ধিতেও বোকা,
আমার শালা কপাল দেখো
সব কিছুতেই ধোঁকা।
স্ত্রী :
বলবেই তো, আমি বলেই
তোমার এ ঘর করি,
সকাল বিকেল কথা শুনেও
তোমার পায়েই পড়ি,
এসব ছেড়ে একদিন ঠিক
যাবো কোথাও চলে,
সামলিও সব একাই তখন
আগেই দিলাম বলে।
স্বামী :
ও কি! ও কি! আবার শুরু
করলে যে ফোঁস, ফোঁস,
আচ্ছা বাবা মেনে নিলাম
ছিল আমার দোষ,
এবার একটু শান্ত হয়ে
বোসো দেখি পাশে,
এতো জল কোত্থেকে যে
তোমার চোখে আসে,
রাগ করেছো তাই না খুব?
বলছো না যে কথা,
হচ্ছে বয়স, একটুতে তাই
গরম যে হয় মাথা।
স্ত্রী :
মাথার আর দোষ কি বলো?
আমারই ভুল Sorry,
তুচ্ছ কথায় রেগে গিয়ে
কেন এমন করি।
স্বামী:
তোমার আর দোষ কি আছে
করছো খাটা-খাটি,
আমিই এসে এমন করি
দিনটাই হয় মাটি।
স্ত্রী :
তুমি হলে বড্ড গোঁয়ার,
বলছি আমার ভুল,
ছোট্ট একটা ব্যাপার নিয়ে
ছিঁড়ছো মাথার চুল,
তোমারই বা কম কি জেদ?
যা বলবে সেটাই?
সারাজীবন উল্টো বলো
বলবো আমি যেটাই।
স্বামী :
উলটো বলি? বেশ বলি,
করলে কেন বিয়ে?
ডিভোর্স দিয়ে দাঁড়াও আবার
ছাদনাতলায় গিয়ে।
স্ত্রী :
পাগল না-কি? ন্যাড়া ক বার
বেলতলাতে যায়?
দিল্লি কা ঐ লাড্ডু আবার
সাধ করে কেউ খায়?
স্বামী :
আচ্ছা ম্যাডাম ভুল হয়েছে,
এবার করো ক্ষমা,
যতো তোমার মধুর বচন
এখন রাখো জমা।
স্ত্রী :
এই তো শুরু, এখনও তো
অনেক আছে বাকি,
একদিনে সব ঝগড়া করে
এমনি দেবে ফাঁকি।
স্বামী :
যাই বলো গো রাগলে তোমায়
আজও Sweet লাগে,
আজও তেমন লাল হয়ে যাও
যেমনি যেতে আগে,
রাতের মেনু কি Darling?
হলো অনেক রাত,
চলো এবার Dinner করি
খতম করো বাত।।