।। এলিস হক ।।
বাংলাদেশ জাতীয় দলকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে অংশ নেয়। অনেক ফুটবল খেলোয়াড় দলে ঠাঁই পেলেও মূল মাঠে খেলার সুযোগ পেয়েছেন অনেক কম।
ঐ ঢাকার মাঠে ঘরোয়া হতে ডাক পেয়েছিলেন। খেলার নাম প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ। এই ফুটবল লীগে যারা ভালো পারফরমেন্স করবেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচকমন্ডলীরা তাদেরকেই ডেকেছিল।
বাংলাদেশ লাল দলের হয়ে যারা প্রাথমিকভাবে ডাক পেয়েছিলেন-
গোলকিপার মহসীন (মোহামেডান),
গোলকিপার সাঈদ হাসান কানন (ব্রাদার্স),
আজমত (মোহামেডান),
রণজিত (মোহামেডান),
আবুল হোসেন (মোহামেডান),
মনি (আবাহনী),
ইমতিয়াজ সুলতান জনি (আবাহনী),
আশিষ ভদ্র (আবাহনী),
খুরশীদ বাবুল অধিনায়ক (আবাহনী),
কাজী সালাহউদ্দিন (আবাহনী),
আশরাফউদ্দিন চুন্নু (আবাহনী),
সম্রাট হোসেন এমিলি (আবাহনী),
মনোয়ার বাবু (ব্রাদার্স),
রউফ বাবুল (ভিক্টোরিয়া),
ওয়াসিম ইকবাল (ব্রাদার্স),
এজাজ আহমেদ (রহমতগঞ্জ),
মনোয়ার হোসেন মনু (বিআরটিসি),
ছোট লিয়াকত (সেনাবাহিনী),
মাহমুদুল হক লিটন (ব্রাদার্স)।
প্রশিক্ষক-আবদুর রহিম। ম্যানেজার-এম আমিন। সহকারী ম্যানেজার-এসএ কালাম।
বাংলাদেশ সবুজ দলের হয়ে যারা প্রাথমিকভাবে ডাক পেয়েছিলেন-
গোলকিপার আতিক (আবাহনী),
গোলকিপার মঈন (রহমতগঞ্জ),
স্বপন কুমার দাস, অধিনায়ক (মোহামেডান),
মানিক (ব্রাদার্স),
কামাল বাবু (ব্রাদার্স),
ফুয়াদ হাসান (ব্রাদার্স),
বড় কামাল (মোহামেডান),
অলোক (মোহামেডান),
বাদল রায় (মোহামেডান),
বাতেন (রহমতগঞ্জ),
আনোয়ার (আজাদ স্পোর্টিং),
সালাম মুর্শেদী (মোহামেডান),
জসি (মোহামেডান),
আরিফ (ব্রাদার্স),
আজিজ (দিলকুশা),
ইলিয়াস হোসেন (ওয়ান্ডারার্স),
জাফরুল্লাহ (ভিক্টোরিয়া),
রঞ্জিৎ (বিআরটিসি),
মুখতার (সেনাবাহিনী)।
প্রশিক্ষক-আবদুস সাদেক। ম্যানেজার-আব্দুল কাদের। সহকারী ম্যানেজার-এম আর সিনহা।
আবারো সেই উপেক্ষার প্রমাদ…
সেই সময় বাঘা বাঘা ফুটবল খেলোয়াড়েরা ঢাকা ফুটবল লীগে ভালো খেলা সত্ত্বেও চরম উপেক্ষার শিকার হয়ে নির্বাচকমন্ডলীর অনুগ্রহ লাভ থেকে বঞ্চিত হন দেশবরেণ্য আবাহনীর স্টপার আবু ইউসুফ, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বাদলসহ আরো অনেকে।
দেশবাসী এই নিয়ে অনেক ক্ষোভ সঞ্চার করেছে। দল নির্বাচন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে। একদম বাজে অবস্থা। ক্লাবের তরফে দুঃখ হতাশার শেষ ছিল না। বাংলার ক্রীড়ামোদীরা বোধ হয় প্রিয় খেলোয়াড়দের বাংলাদেশ দুটি দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক না পাওয়া নিয়ে অতৃপ্ত বেশি পেয়েছিলেন। ইতিহাস আবারো লজ্জা দ্যায় ঐ সময়ের নির্বোধ নির্বাচকগোষ্ঠীদের উপর। কিন্তু গোষ্ঠীরা লজ্জাবোধ করে না।
স্বাগতিক বাংলাদেশ লাল দলকে খ গ্রুপে রেখে অন্য দেশগুলো ছিল-ইরাক, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও নেপাল এবং
স্বাগতিক বাংলাদেশ সবুজ দলকে ক গ্রুপে রেখে অন্যান্য দেশগুলো ছিল-গতবারের চ্যাম্পিয়ন চীন, মালয়েশিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ডের মিডলসেক্স ওয়ান্ডারার্স ক্লাব।
বাংলাদেশ সবুজের ছত্রখান পরাজয়…
এইবার আপনাদের পড়তে হবে দৈনিক সংবাদ হতে ডকুমেন্টের কিছু অংশ লেখা-পড়ুন তাহলে…তারিখটা ছিল-২৫শে আগস্ট ১৯৮৩ সাল। দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার।
তখনকার সামরিক আইন শাসক জেনারেল এরশাদের আমল। ‘আজ বহু প্রতীক্ষিত তৃতীয় প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ শুরু হচ্ছে…বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকা স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বরে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি এএফএম আহসানউদ্দিন চৌধুরী এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন…।’
‘৮টি বিদেশী দলসহ ১০টি দলের মধ্যকার পক্ষকাল ব্যাপী এই টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী দল অংশ নিচ্ছে…।’ ‘উদ্বোধনী খেলায় মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সবুজ এবং পরের খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে গতবারের (১৯৮১) দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ড…।’
উদ্বোধনীর দিন…
‘তৃতীয় প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী খেলায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশ সবুজ দলকে ২-১ গোলে হারিয়েছে…।’ ‘আজ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই খেলার প্রথমার্ধে উভয় দল একটি করে গোল দেয়…দুই দলের খেলার মান ও ধারা অনুযায়ী ফলাফল ১-১ গোলে ড্র বা সবুজ দলের জয়ী হওয়া উচিত ছিল…কিন্তু জসি ও গাফফারের ব্যর্থতা জয়কে যেমন হাতছাড়া করেছে, তেমনি ছোট কামালের ভুল পাস দলের পরাজয় ডেকে আনে…।’
কেমন ছিল বাংলাদেশ সবুজ দলের খেলা?
‘সবুজ দল জেতার মতো খেলেনি…খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা এবং খেলায় ভুল-ভ্রান্তির ফলে এই দলকে কখনো শক্তিশালী বা সংগঠিত হতে দেয়নি…এর সঙ্গে প্রত্যেকের ‘একলা চলননীতি’ যোগ হয়ে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে…তবুও বেশি গোলে না হারার কারণ গোলরক্ষক মঈন, দলনায়ক স্বপন ও বড় কামালের র্দঢ়তা…এরা শক্তি ও সংহতি বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন…কিন্তু অপর ৮ জনের ব্যর্থতার গ্লানি মুছা সম্ভব হয়নি….
দলগত সমঝোতা, পাসিং এবং আক্রমণ রচনা সবদিক দিয়েই সবুজ দল নিরাশ করেছে…যার ফলে একটি মাঝারি দল হয়েও মালয়েশিয়ারা জয়ের আনন্দ নিয়ে ফিরেছেন…তাদের ফুটবল সেন্স বেশ টনটনে হলেও টেকনিকে তেমন উন্নত নয়…তবে শারীরিক দিক দিয়ে বেশ শক্ত সামর্থ্য….এতদসত্ত্বেও দুই দলের নিম্নমানের খেলা, বৃষ্টি ভেজা মাঠে তথা স্টেডিয়াম গ্যালারিতে প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের মন ভরতে পারেনি…।’
গোল করার বর্ণনা….
সবুজ দল হারলেও গোলের সুযোগ পেয়েছে প্রথমে…ইলিয়াসের পাস থেকে অলোক এই সুযোগ পেয়ে গোলে গ্রাউন্ড শট নেন…কিন্তু মালয়েশিয়ার গোলরক্ষক কৃষ্ণমুর্তি প্রস্তুত ছিলেন…এর একটু পরেই মালয়েশিয়া গোল পায়…একটি আক্রমণ থেকে আজিজুলের শট বারে লেগে ফেরত আসলে রাজিফ সহজেই গোল করেন (১-০)…
২৮ মিনিটে কামালের একটা মাপা লব গেলে ঢোকার সময় গোলরক্ষক কৃষ্ণমুর্তি কোনোমতে বাঁচালেও ৪৪ মিনিটে গোলশোধ হয়…সালাম মুর্শেদীর ক্রস থেকে গফফার গেল দেন (১-১)…
বিরতির পর দুই দল কয়েকবার বিচ্ছিন্ন আক্রমণ চালায়…এর মধ্যে একবার জসি ওপেন নেট পেয়েও শট নিতে ব্যর্থ হলে গাফফার বল পান এবং জোরে শট নিতে গিয়ে বাইরে মারেন…অবশেষে ৩৪ মিনিটে লেফট ব্যাক কামাল বল মাঝমাঠে না ফেলে রাইট ব্যাককে দিতে গিয়ে ভুল পাস করলে মালয়েশিয়ার লেফটব্যাক মানজামান বল পেয়ে ক্রস পাস দেন…তা থেকে নাসির গোল করেন (২-১)…
হলুদ কার্ড খান বাংলাদেশের গোলরক্ষক মঈন ও মালয়েশিয়ার নাসির ও ইউসুফ…।
মালয়েশিয়া : গোলকিপার কৃষ্ণমুর্তি-১, মানজামান-১৫, ধর্মলিঙ্গম-২, জুলফিকলি আলী-৫, রবিন্দ্রম-৬, আজিজুল-৮ (আবদুল্লাহ-১৪), লাহাদ দাতুক-৩, নাসির-১০ (ইউসুফ-৭), রাজিফ-৯, আজলান-১১ ও করিম-১৩।
বাংলাদেশ সবুজ : গোলকিপার মঈন, মানিক, বাতেন, স্বপন, ছোট কামাল, বড় কামাল, অলোক (ফুয়াদ), গফফার, সালাম (আরিফ), ইলিয়াস ও জসি।
রেফারি : ইউ জং রিন (দক্ষিণ কোরিয়া)। সহকারী রেফারি : মাথু শ্রেষ্ঠা (নেপাল) ও হীরন কংতিয়ান (থাইল্যান্ড)…।
এই ছিল প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ান যুব দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ সবুজ দলের ক্রীড়া অনুশীলনীর ইতিহাস!
আসলে একটাই স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের হৃদয়ের আকাশে বাতাসে ঐ এশিয়ার শীর্ষস্থানে পৌঁছে যাওয়া। অনেক স্বপ্নের মাঝেও অনেক চমকপ্রদ ফলাফল ধরা দিয়ে যাচ্ছিলো প্রতি মুহূর্তে। কিন্তু কোথায় কী…!
এলিস হক
ক্রীড়া সাংবাদিক-ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার
ফুটবল-রাগবি ও হ্যান্ডবল রেফারি
বিপিএড (প্রথম শ্রেণী)
১৫ই মে ২০২০