আজ রাঙ্গুনিয়ায় সুলতানুদ্দীন হযরত বাচা শাহ (রাহঃ)’র বার্ষিক ওরশ শরীফ

অন্যদৃষ্টি অনলাইন
বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ১:৫০ পূর্বাহ্ন

দেলোয়ার হোসাইন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি।।

জন্ম ও বংশ পরিচয় ।। সুলতানুদ্দীন হযরত বাচা শাহ (রাহঃ)’র (প্রকাশ বাচা ফকির) তাহার সম্মানিত পিতার নাম হযরত ফজর আলী (রহ.)। তাঁহার পূ্র্বপুরুষগণ এশিয়া মহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক জগতের প্রাণকেন্দ্র ফড়িকছড়ি ‌‌‌‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফ’ অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন।

কথিত আছে যে, গাউসুল আজম হযরত আহমদ উল্লাহ (ক) কাদেরী আল মাইজভান্ডারীর আধ্যাত্মিক ইশারায় তাঁর পূর্বপূরুষগণ রাঙ্গুনিয়া পোমরা ইউনিয়নের কর্ণফুলি সংলগ্ন মহওরখীল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) সম্মানিত পিতা হযরত ফজর আলী (রাহঃ) খুবই দারিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। আর দারিদ্র পরিবারের সন্তান হাওয়ায় খুবই কষ্টকর অবস্থায় দিনাপাত করতেন।তিনি অত্যন্ত আল্লাহভীরু, তাক্ওয়াহবান, দ্বীনদার, পরহেজগার, বুযর্গ ব্যক্তি ছিলেন। দুনিয়ার সামান্য হায়াতে জিন্দেগীতে পার্থিব লোভ লালসা ধন, ঐশ্বর্য, বিলাসিতা তাকে মোহ্ করতে পারেনি।

একজন দ্বীনদার বুুঁর্গ ব্যক্তি হিসেবে খুবই স্বাভাবিক সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। কোনো সময় নিজের পরিবার পরিজনের জন্য খাবার চাল ডাল জোগাড় করতে না পারলে নিজ গ্রামের লোকজনদের নিকট হতে খোজাখুঁজি করে খেতেন। অনেক কষ্টের মাধ্যমে হযরত ফজর আলী (রাহঃ) নিজের হায়াতে যিন্দেগী অতিবাহিত করেছিলেন। অবশেষে এই যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গানে দ্বীনের ঘরে ১৯শে, পৌষ ২রা জানুয়ারী ১৮৫১ সালে রাঙ্গুনিয়ার উজ্জল জ্যোতিষ্ক সুলতানুদ্দীন হযরত বাচা শাহ ফকির (রাহঃ) জন্মগ্রহণ করেন।

বাল্যকাল ও শিক্ষা জীবন ।। বাল্যকাল হতেই তিনি খুবই মেধা সম্পন্ন ও শান্ত প্রকৃতির বালক ছিলেন। তার সম্মানিত পিতা হযরত হযরত ফজর আলী (রাহঃ) তাহাকে খুব মহব্বত করতেন ও ভালোবাসতেন।  ধর্মপরায়ণ পিতার সন্তান হাওয়ায় হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) খুব পরহেজগার ও ধর্মপ্রাণ বালক ছিলেন। তার মেধাশক্তি প্রবল হাওয়ায় তার পিতা তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন।

তিনি আরবী, বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি গণিত শাস্ত্রে খুবই পারদর্শী ছিলেন। তিনি বৃটিশ পিরিয়ড সময় কালে মেট্রিক পাশ শিক্ষার সনদ লাভ করেন। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি শিক্ষার উচুঁস্তর অতিক্রম করতে পারেননি। দারিদ্রতার প্রবল কষাঘাতে ও মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা ছিল প্রবল। আর এই খোদা প্রেম হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) মারেফাতের ভান্ডারে পরিপূর্ণ করেন।

প্রাপ্তবয়স্ক হতেই তিনি খোদা তায়ালার মারেফাত জগতে ডুব দিয়ে ফানাফিল্লাহর জগতে চলে যান। তিনি সর্বক্ষণ নীরব নির্জন জায়গায় বসে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল থাকতেন। হাত নেড়ে ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ জিকির করায় ছিল তার রুহানিয়াতের একমাত্র পরিতৃপ্ত খাদ্য।

খিলাফত লাভ ।। হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) মাজযূবে সালিক তথা মারেফাত জগতের অন্যতম প্রাণপুরুষ আধ্যাত্মিক জগতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত গাউসুল আজম মাইজভান্ডারীর (রাহঃ) ৩২তম খলিফা হিসেবে খেলাফত লাভে ধন্য হয়।

কাশফ কারামত ।।  আধ্যাত্মিক চিকিৎসক হিসেবে হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) দুনিয়ার সকল চিকিৎসার পর যখন ডাক্তারের ডাক্তারি কোনো কাজ হয় না তখন চট্টগ্রামের অধিকাংশ মানুষ মাজযূবে সালিক হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) (প্রকাশ বাচা ফকির) দরবারে চলে আসতেন এবং হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) কাছে সব কথা খুলে বলতেন এবং তিনি সব কিছু শুনে তার পবিত্র জবানে পাকে বলতেন, ‌‘যা আদা দি নুন দি হাগুই’ ‘যা আদা দি নূন দি হাগুই’ অর্থ্যাৎ আদা ও লবন মিশিয়ে খাও তাহলে ভালো হয়ে যাবি, মাশাআল্লাহ তার এই আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় রোগাক্রান্ত রোগীরা জটিল কঠিন রোগ হতে ভালো হয়ে যেতো এবং আরোগ্য লাভ করে হযরতের দরবারে হাদিয়া নিয়ে আসতেন ও হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) সামনে উপস্থিত হয়ে নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করতেন। এভাবে তিনি আধ্যাত্মিক চিকিৎসা দিয়ে মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন।

সুলতানুদ্দীন হযরত বাচা শাহ (রাহঃ)’র  সম্পর্কে  ওলামা মাশায়েখগণের অভিমত।।
১. ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রাহঃ) বলেন, বাহে্র আঁ-বা-চা ফকি-র  সদ আ-ফরি আ-ফরী  সদ আ-ফরী সদ আ- ফরী, ছাহেবে কাশফ করামত বূদ হাম আহলে সফা বূ দউ মাযজুবে সালিক দরমিয়ানে আউলিয়া।

২. আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ কারী ছৈয়দ মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান আন নকসবন্দী (রাহঃ) বলেন, হযরত ফকীর বাচা শাহ (রাহঃ) একজন আল্লাহর মজুজুব ওলিয়ে কামেল। যার পবিত্র জানাজা শরীফে অসংখ্য জ্বিন ও ফেরশতাকূল হাজির হয়ে জানাজার নামাজ আদায় করে ছিলেন যা আমার চক্ষু সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেল।

ওফাত লাভ ।।  সুলতানুদ্দীন হযরত বাচা শাহ (রাহঃ) ১৪ই ফেবুয়ারী  মোতাবেক ১৯৫৩ সালে অসংখ্য ভক্ত অনুরক্তদের রেখে ইন্তেকাল করেন এবং তাঁর জানাজার নামাজের ইমামতি করেন হাফেজ কারী ছৈয়দ মুজিবুর রহমান (রাহঃ)।

অন্যদৃষ্টি/এলিস হক

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com