“বাদশাহ আলমগীর কুমারে তাঁহার পড়াইতো এক মৌলভী দিল্লীর; একদা প্রভাতে গিয়া, দেখেন বাদশাহ-শাহাজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া; ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে…”
শৈশবে এই কবিতা পড়েননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। বিখ্যাত ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতার কবি কাজী কাদের নওয়াজ।
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান এই কবি ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতের মর্শিদাবাদে মাতুলায়নে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ভারতের বর্ধমানে। পরে তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার অদূরে কুমার নদের তীরবর্তী মুজদিয়া গ্রামে অত্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশে বসবাস শুরু করেন। মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মুজদিয়া গ্রামে বসতভিটায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে পুরনো বাসভবনটি। অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে কবির শেষ স্মৃতি চিহ্ন।
কবি কাদের নওয়াজ ইংরেজি সাহিত্যে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর নিজের গ্রাম মুজদিয়া এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেও কিছুদিন শ্রীপুর মহেশচন্দ্র স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সাহিত্যামোদী পরিবেশে বেড়ে ওঠা কাদের নওয়াজ কবি হওয়ার স্বপ্ন লালন করেছিলেন আপন হৃদয়ে। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের প্রতি তিনি ছিলেন স্নেহপ্রবণ ও আদর্শপ্রাণ। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রতিটি ভাষাতেই তাঁর ছিল অসামান্য পান্ডিত্য।
ভারত ও বাংলা দেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে তাঁর অসংখ্য কবিতা ও বিভিন্ন রচনা প্রকাশিত হয়। কবির লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে, মরাল, নীল কুমুদী। ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘দাদুর বৈঠক’ ও ‘দস্যু লাল মোহন’। তাঁর প্রকাশিত উপন্যাস ‘উতলা সন্ধ্যা’ ও ‘দুটি পাখি দুটি তীরে।’’
কবি কাদের নেওয়াজ সাহিত্যিক জীবনে পেয়েছেন বাংলা একাডেমীসহ অসংখ্য পুরস্কার, অভাবিত সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন, পেয়েছিলেন বিভিন্ন পদক।
১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন। কবিকে গ্রামের বাড়ি মুজদিয়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অযত্ন-অবেহলায় পড়ে আছে কবি কাদের নওয়াজের বাসভবনটি। সংস্কার না করায় পুরাতন এই দালানের ইট সুড়কি ভেঙ্গে পড়ছে। ভবনের জানালা-দরজা খুলে নিয়ে গেছে অনেক আগেই। কবির শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকু সংরক্ষণের নেই কোন উদ্যোগ। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈনুল হাসান বাসভবনটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করলেও কাজ হয়েছে নাম মাত্র। অযত্ন অবহেলায় কবির শেষ স্মৃতি চিহ্ন হয় তো কালের বিবর্তণে হারিয়ে যাবে। ভবনটি দ্রুত সংস্করণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার ও নির্বাহী সম্পাদক কবি ও সাহিত্যিক, কাজী কাদের নওয়াজের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী ফারুক নওয়াজ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক কবি ছিলেন কাজী কাদের নওয়াজ। তার সাহিত্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে শান্তি নিকেতনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কবির স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
কবি কাজী কাদের নওয়াজের অপর ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী মাহবুব নওয়াজ বলেন, আমাদের পৈত্রিক নিবাস মুজদিয়া হলেও আমরা সেখানে বসবাস করি না। তবে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারনে কবির বাসভবনের সংস্করণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা কবির বংশধর হলেও অনেক কার্যক্রমই আমাদের অবগত করা হয় না, যা আসলেই দূঃখজনক।