নৌকার ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

রাশেদুজ্জামান রিমন
বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২২, ২:৪৪ অপরাহ্ন

পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী যথাক্রমে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১১৪, ১৭৭ ও ২৩২টি। এমন ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য প্রার্থীরা দুষছেন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরোধকে। আর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন আওয়ামী লীগের জেলা নেতারা।

বুধবার কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১১ ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মাত্র ১টিতে জিতেছে নৌকার প্রার্থী। ৮টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। একজন জাসদ সমর্থিত ও অপরজন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এত কম ভোট পেয়েছেন যে, তাদের জামানতই বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এর ৪৪ (৩) ধারায় বলা হয়েছে-কোন প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ অপেক্ষা কম পেলে তার জামানতের অর্থ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।

কুষ্টিয়া সদরের বটতৈল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোমিন মন্ডল নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১১৪টি। এই ইউনিয়নে ২৬ হাজার ৪৭০ ভোটের মধ্যে ২০ হাজার ৭০৯ ভোট পড়ে। বিধিমালা মোতাবেক এক-অষ্টমাংশ ভোট হয় ২ হাজার ৫৮৯টি। এই ইউনিয়নে আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোমিন মন্ডল পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির ঘোড়া প্রতীকে ৮ হাজার ৬৮২ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন।

এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোমিন মন্ডল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ বাবলু সম্পর্কে বেয়াই। বাবলুর ছোট ভাই আব্দুল মাজেদ বিয়ে করেছেন মোমিন মন্ডলের বোনের সঙ্গে। এখানে চাউর আছে মোমিন মন্ডল ভোটের তিন দিন আগে চশমা মার্কার প্রার্থী বেয়াই বাবলুর প্রতি ভোটের সমর্থন দিয়ে দেন। তবে তারা দুজনেই এ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, এটি তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মাত্র।

নৌকার পরাজিত প্রার্থী জেলা কৃষকলীগের সভাপতি এম এ মোমিন মণ্ডল বলেন, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে ভোট করায় আমি ভোটের দুই দিন আগে থেকে ভোট করা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনি আফসোস এবং চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলীয় নেতারা কেউ আমার সঙ্গে ছিলেন না। দলের নেতারা যদি দলের ভোট না করে তাহলে আমার কী করার আছে?

বটতৈল ইউনিয়নে গত ২১ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মিন্টু ফকিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর মিন্টুর সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে ব্যাপক শক্তি প্রদর্শন করে। সেই ঘটনার পর থেকেই মূলত নৌকার প্রার্থী কোনঠাসা হয়ে পড়েন। এছাড়াও ২৫ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ প্রভাবশালী চালকল ব্যবসায়ী নেতা ওমর ফারুকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করার নির্দেশনা দেন। ‘নেতার সিগনাল’ উল্লেখ করে তিনি ওই নির্দেশনা দেন বলে উল্লেখ করেন।

আলামপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরও একই রকম ভরাডুবি হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান বিশ্বাস নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৭৭টি। এ ইউনিয়নে মোট ভোট পড়েছে ১৮ হাজার ২৭৪। এখানেও বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারুজ্জামান বিশ্বাস। চশমা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯ হাজার ৫০৮ ভোট। এই ইউনিয়নে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রার্থী পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন।

ইউনিয়ন জুড়ে এতো কম ভোট পাওয়ার বিষয়ে পরাজিত প্রার্থী আব্দুল হান্নান বলেন, দলে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। এছাড়া মেম্বার ভোটের ছকে কম ভোট হয়েছে। কম ভোট পাওয়ার বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্য নেতাকর্মী বা থানা ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রতি কোনো অভিযোগ আছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন অভিযোগ করে আর কি করবো? কিছু করার নেই, অভিযোগ করছি না।

আর হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম সম্পা মাহমুদ পেয়েছেন ২৩২ ভোট। এ ইউনিয়নে ১৯ হাজার ২৮০ ভোট পড়েছে। এখানে সম্পা মাহমুদের আপন ভাসুর স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মোস্তাক হোসেন মাসুদ মোটরসাইকেল প্রতীকে ৮ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। এখানেও নৌকার প্রার্থী পঞ্চম স্থান পেয়েছেন। এখানে ২ হাজার ৪১০ ভোট পেলে জামানত ফেরত পেতেন।

এই ইউনিয়নে নৌকার পরাজিত প্রার্থী এম সম্পা মাহমুদ ও বিজয়ী এম মোস্তাক হোসেন সম্পর্কে দেবর-ভাবি। প্রচার আছে ভোটের ৩ দিন আগে সম্পা তার দেবরকে সমর্থন দিয়ে দেন। এ কারণে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রশিদের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নামেন। যদিও এসব কথা অস্বীকার করেন সম্পা মাহমুদ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডল। তারা বলেন, শেষ পর্যন্ত নৌকারই ভোট করেছি। তবে পরাজিত প্রার্থী সম্পা মাহমুদ বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের দলীয় নেতারা প্রকাশ্যে তার বিরোধীতা করায় ভোটের এমন ফল হয়েছে।

নৌকার এমন ভরাডুবির বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, দলীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এমন ফলাফল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে, গত ১১ নভেম্বর মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী শারমিন আক্তার নাসরিনেরও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। পোল হওয়া ২৪ হাজার ৮৩২ ভোটের মধ্যে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৪২৭ ভোট।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com