স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিনির্ধারণীর সর্বোচ্চ ফোরাম সিনেট। কিন্তু প্রায় অর্ধযুগ ধরে অকার্যকর রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গুরুত্বপূর্ণ এ বডি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হচ্ছে না।
বছরে অন্তত একবার সিনেট অধিবেশন হওয়ার কথা থাকলেও রাবিতে গত ছয় বছরে একবারও হয়নি। সিনেট প্যানেল নির্বাচন ছাড়া উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ায় এ বডি দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। তবে শিগগিরই সিনেট অধিবেশনের আয়োজন হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম।
২০১৬ সালের ১৯ মে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মিজানউদ্দীনের সভাপতিত্বে সর্বশেষ সিনেটের ২২তম অধিবেশন বসে। এরপর পূর্ণ মেয়াদ পার করলেও কোনো সভা আহ্বান করেননি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের মেয়াদ এক বছর পার হয়েছে। তিনিও এ পর্যন্ত কোনো সিনেট সভা ডাকেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মতে, নিয়মিত সিনেট অধিবেশন জরুরি, তবে কোনো প্রশাসনই চায় না তাদের কেউ বিরক্ত হোক। তাই স্বেচ্ছায় সিনেট অধিবেশন এখন আর সম্ভব নয়। এর জন্য শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সিনেট সদস্যের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া দ্রুত সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ পদে নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্য সংখ্যা পূর্ণাঙ্গ করা জরুরি।
রাবিতে সিনেট কার্যক্রম বন্ধ থাকার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০১ সালের ২৮ ও ২৯ জুন ২০তম সিনেট অধিবেশনের পর এর কার্যক্রম বন্ধ থাকে ১৪ বছর। এর পর ২০১৫ সালের ১৮ মে ২১তম সিনেট অধিবেশনের মাধ্যমে এ অচলায়তন ভাঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মিজানউদ্দীন। তার সভাপতিত্বে ২০১৬ সালের ১৯ মে সর্বশেষ সিনেটের ২২তম অধিবেশন বসার পর আর সভা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য বছরে অন্তত একবার সিনেটের সভা ডাকবেন। অধ্যাদেশের ২০ ধারা অনুযায়ী, সিনেটের সদস্য হবেন ১০৫ জন। উপাচার্য পদাধিকার বলে সভাপতি, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ সদস্য এবং রেজিস্ট্রার হন সচিব। রাবির সিনেটে এ চারজন ছাড়া সব সদস্যপদের মেয়াদই শেষ হয়েছে বহু আগে।
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিনেট অধিবেশন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম অবৈধ হয়ে যাবে—বিষয়টা এমন নয়। কারণ উপাচার্য বিশেষ নির্বাহী ক্ষমতা বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিকভাবে সবকিছু হওয়া জরুরি।
সিনেট পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীদের অনিচ্ছাকেও দায়ী করেন তিনি এবং বলেন, একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্মে আসার প্রতি শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যেত। বর্তমানে তেমনটা চোখে পড়ে না। ফলে সিনেট, রাকসুসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, যখন কোনো উপাচার্য কারও সহযোগিতায় নিয়োগ পান, তখন তাকে অনেক কিছু বাদ দিয়ে চলতে হয়। তবে সিনেট প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচিত উপাচার্য হলে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়া সব সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারতেন। তার একটা নৈতিক অবস্থান থাকত। কিন্তু বর্তমানে সেই চর্চা আর নেই। এর জন্য সিনেটর ও শিক্ষাক উভয়ই সমানভাবে দায়ী।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার সিনেট নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ গোছাতে প্রায় বছর চলে গেছে। তবে সিনেট অধিবেশনের জন্য এরই মধ্যে গ্র্যাজুয়েটদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সিনেট অধিবেশন ডাকতে পারব।