মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন শেখ হাসিনা

অন্যদৃষ্টি অনলাইন
মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:০৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। ভারতে পলাতক ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

অভিযোগ করা হয়েছে, গত বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে তিনি সরাসরি নির্দেশ দেন। সেই অভিযানে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হন বলে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ময়নুল করিম বলেন, আমাদের কাছে ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ ও সাক্ষ্য রয়েছে, যেগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাই তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, তিনি (হাসিনা) এক হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রতিবাদ দমন অভিযানে নিহতদের মরদেহ পোড়ানোর নির্দেশ দেন এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার নির্দেশও দেন। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুতই শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট তিনি হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান। এরপর বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে হামলা চালান। সেদিন ঢাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা বলে বিবেচিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। অন্য দিকে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জুলাইয়ে গ্রেফতার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি বিক্ষোভ দমন অভিযানে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন।

শেখ হাসিনার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টনের প্রস্তাবও আদালতে তোলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত এবং আলাদা দুর্নীতি মামলারও আসামি।

তার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী তখন আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।

এ দিকে শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক এই বিচারকে ‘একটি সাজানো প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনিও বাংলাদেশে নেই, তবে এক মামলায় অভিযুক্ত। টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি তার খালার প্রভাব খাটিয়ে পরিবারকে জমি পাইয়ে দেন।

আদালতে শেখ হাসিনার পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন আগামী রোববার থেকে শুরু হয়ে আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা হতে পারে।

এ দিকে বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। আসন্ন এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না। ফলে সাবেক বিরোধী দল বিএনপি এখন নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ওপর ভয়াবহ দমন-পীড়নের জন্য বাংলাদেশের প্রসিকিউটররা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন, যা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।

হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসানের আগে কয়েক সপ্তাহের অস্থিরতায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এটি ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন যে, হাসিনার ১,৪০০ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। যেহেতু এটি মানবিকভাবে সম্ভব নয়, তাই আমরা কমপক্ষে একটির দাবি করছি, [হাসিনার] লক্ষ্য ছিল নিজের এবং তার পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা। তিনি একজন নিষ্ঠুর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন এবং তার কৃত বর্বরতার জন্য কোনো অনুশোচনা নেই।

সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী কিছু দৃশ্য ঘটে ৫ আগস্ট, যেদিন হাসিনা হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যান এবং জনতা ঢাকায় তার বাসভবনে হামলা চালায়, বিবিসির একটি তদন্তে দেখা গেছে।

ঢাকার ব্যস্ততম একটি এলাকায় পুলিশ সেদিন কমপক্ষে ৫২ জনকে হত্যা করে, যা এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশি সহিংসতার সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে।

হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত প্রতিরক্ষা আইনজীবী যুক্তি দেন যে, বিক্ষোভকারীদের সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল।

Facebook Comments
সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

আরো সংবাদ