পাবনা টিটিসির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

পাবনা প্রতনিধি
শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১, ৮:০২ অপরাহ্ন

পাবনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সেইপ প্রজেক্টের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

কয়েকদিন পূর্বে এই প্রতিবেদকের “পাবনা টিটিসি’র অধ্যক্ষ হিসাবরক্ষকের অনৈতিক সম্পর্ক ও দুর্নীতি অনিয়মে ভেঙ্গে পড়েছে টিটিসির স্বাভাবিক কার্যক্রম” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে অত্র প্রতিষ্ঠানের সেইপ প্রজেক্টের ৮ম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা এই প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করে অধ্যক্ষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাবনা টিটিসিতে বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের দারিদ্র বিমোচন ও  কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিনামূল্যে বিভিন্ন ট্রেডে স্বল্প মেয়াদী বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে পাবনা টিটিসিতে সেইপ প্রজেক্টের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন, সুইং মেশিন অপারেটর, মিডলেভেল ম্যানেজমেন্ট, ইলেট্রিক্যাল, ওয়েলিন্ডং এন্ড ফেব্রিকেশন, প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং ও ড্রাইভিং-এ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এখানে প্রতিটি ট্রেডে ৩০ জন করে মোট ২১০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। এই কোর্স সমূহে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং প্রতিদিন যাতায়াত ভাতা বাবদ ১০০ টাকা করে প্রদান করা হয়।

কোর্স শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এনটিভিকিউএফ লেভেল-১ এসেসমেন্ট (ফাইনাল পরীক্ষা) করা হয়। এই ফাইনাল এসেসমেন্ট ফি ১০৫০ টাকা সেইপ প্রজেক্ট থেকে পরিশোধ করার কথা থাকলেও এই টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন।

এই প্রতিবেদক কুমিল্লা টিটিসির অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান, খুলনা টিটিসির অধ্যক্ষ মো. মনিরুল ইসলামসহ আরো কয়েকটি টিটিসির অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে জানতে পারেন সেইপ প্রজেক্টের ৮ম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসেসমেন্ট ফি ১০৫০ টাকা সেইপ প্রজেক্ট থেকে দেয়া হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এসেসমেন্ট ফি বাবদ কোন টাকা নেওয়া হয়নি।

একজন অধ্যক্ষ এই প্রতিবেদককে সেইপ প্রজেক্ট থেকে ইস্যুকৃত গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং তারিখে সহকারী নির্বাহী প্রকল্প পরিচালক (উপ সচিব) রওনক জাহান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রদান করেন। ঐ চিঠিতে টিটিসির অধ্যক্ষদেরকে সেইপ প্রজেক্টের কন্টিজেন্সী খাত হতে এসেসমেন্ট ফি জনপ্রতি ১০৫০ টাকা করে পরিশোধ করার নির্দেশনা থাকার পরেও অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ১১০০ টাকা করে আদায় করেছেন।

এই প্রতিবেদকের সাথে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিভিন্ন ট্রেডের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা হয়। সুইং মেশিন অপারেশন ট্রেডের ৮ম ব্যাচের একজন ছাত্রী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন “আমি খুব গরীব মানুষ, পরীক্ষার ফি ১১০০ টাকা দিতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। এমন কিছু করেন যেন টাকাটা ফেরত পাই।”

গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেডের আরেকজন ছাত্র জানান, ‘কুষ্টিয়া টিটিসিতে আমার বন্ধু কোর্স করেছে। ওর কোন ফি লাগেনি, কিন্তু আমাদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ ১০৫০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোন টাকা ফেরত পাইনি।” সুইং মেশিন অপারেশন, ইলেকট্রিক্যাল ও ওয়েলন্ডিং ট্রেডের একাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা একই অভিযোগ করেন। এভাবে অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম বিভিন্ন ট্রেড থেকে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষর বক্তব্য জানার জন্য বৃহস্পতিবার টিটিসিতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি দুপুরে ঢাকা চলে গেছেন। এর পূর্বেও প্রতিবেদক অধ্যক্ষকে মুঠো ফোনে কল করলে অধ্যক্ষ কল রিসিভ করেননি।

এছাড়াও অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম একটি রাজনৈতিক মহল এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ না করতে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com