সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তে মায়ানমারের সামরিক মহড়া ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মায়ানমারের বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে এবং সংযমী হয়ে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের যেখানে যাকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া দরকার যথাযথ ব্যক্তিদের যথাস্থানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কার কথা, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করবো না, প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। সেভাবে প্রশাসন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব প্রস্তুত আছে।’
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মধ্যবর্তী স্থানে মধুমতী নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতুর চলমান কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হবো না। আমারা আলাপ আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে চাই। প্রয়োজনে বিষয়টা জাতিসংঘে নিয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে জাতিসংঘে বক্তব্য দেবেন। সেখানে তিনি ব্যাপারটা উত্থাপন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।’
তিনি বলেন, ‘এখন যুদ্ধ করার সময় না। ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বে জ্বালানি সংকট চলছে। গোটা বিশ্বে আজকে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আমাদের এখানে বাধ্য হয়ে জ্বালানির মূল্য বাড়াতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। কাজেই যুদ্ধটা আমরা চাই না। আরেকটা যুদ্ধ এখানে বাধাবো, এটার দরকার নেই। আমি আশা করি, শান্তিপূর্ণ সমাধানই কাম্য। মিয়ানমারও আশা করি শান্তির পথে আসবে।’
আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের নামে মিথ্যাচার করছে। প্রতিদিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিবাস্বপ্ন দেখছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদালত ফয়সালা করে দিয়েছে। এখানে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে মিউজিয়ামে চলে গেছে। ওটা আর ফিরে আসার সম্ভাবনা আপাতত নেই।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এটা আমি আশ্বস্ত করতে চাই। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হবে। আর এই সরকার মূল দায়িত্ব পালন করবে না। নির্বাচনকালীন অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো এই সরকার রুটিন ওয়ার্ক পালন করবে। যারা নির্বাচনে দায়িত্বে থাকবে তারা সরকারের অধীনে থাকবে না। তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে, নির্বাচন কমিশেনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে।’
ওবায়দুল কাদের গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে নির্মিত সেতু পরিদর্শন করেন। সেতু পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতু দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি। শুধু নড়াইলবাসীর জন্য নয়, এই প্রতিশ্রুতি যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদা, খুলনাসহ গোটা অঞ্চল সুফল পাবে। ৬৯০ মিটার দীর্ঘ ৬ লেন বিশিষ্ট এ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আমরা যথা সময়ে কাজ শেষ করেছি। অক্টোবর মাসেই বহু প্রতিক্ষিত এ সেতুটি উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা দিয়ে কথা রেখেছেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই সেতুর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সুফল গোটা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ভোগ করবেন। এই সেতুকে আর কালনা সেতু বলা যাবে না। এই সেতুর নাম মধুমতি সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর নামকরণ করেছেন মধুমতি সেতু। এই সরকারের আমলে সুদুর পাহাড়ে পর্য ন্ত যেদিকে যান শুধু রাস্তা। ইতিহাসে এর কোনো নজির নেই। যেখানে প্রয়োজন ৪ লেন ৬ লেন আমরা করেছি। আমরা পদ্ম সেতু করলাম, এর সুফল পেতে হলে রাস্তাও প্রশস্ত করতে হবে। সেটা আমরা জানি। আমাদের পরিকল্পনা আছে। পর্যাক্রমে বাস্তবায়ন হবে।’
এ সময় নড়াইল ১ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা, গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন, মধুমতি সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান, কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী হাসানসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।