শরীরে ফোস্কা ওঠা রোদ আর তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। প্রচণ্ড গরমে এ জেলায় মানুষের টিকে থাকাই এখন মুশকিল হয়ে উঠেছে। কখন বৃষ্টি নামবে, একটু শীতল হবে আবহাওয়া সে অপেক্ষায় যেন প্রহর গুনছে সবাই। তীব্র তাপপ্রবাহে যখন প্রাণিকুলের হাঁসফাঁস অবস্থা, তখনও সহসাই মিলছে না কোনো সুখবর।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তিতে পরেছে সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষেরা। স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া ঠান্ডা শরবত, ডাব, আইসক্রিম ও টিউবওয়েল থেকে পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিস বলছে, এ জেলায় টানা ৫ দিন ধরে বিরাজ করছে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আজ বুধবার দুপুর ৩ টায় তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এ দিকে মঙ্গলবার বেলা তিনটায় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সন্ধ্যা ছয়টায় তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আগামী দুদিন রয়েছে তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা।
আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, এক মাসের বেশি সময় ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত ২ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ১৫ দিন এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গত কয়েক দিনে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয় এ জেলায়।
চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘টানা পাঁচ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়াতে পারে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবের কারণে ১২ মে থেকে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে যাবে। তবে এর আগ পর্যন্ত দাবদাহ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে চাহিদা বাড়লেও বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে; বেড়েছে লোডশেডিং। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি বেশি খারাপ। বিভিন্ন এলাকায় দিনে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে খবর আসছে। গরমের মধ্যে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, তিন কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। চরম গরমে এসির লোড মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। জ্বালানির অভাবে ও যন্ত্রপাতি সংরক্ষণে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
গাড়াবাড়িয়ার বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ জানান, দিন-রাত মিলিয়ে তাদের এলাকায় ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিশেষ করে রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়। গরমে আর ঘুমানো সম্ভব হয় না। এভাবেই দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটছে।