ণত্ববিধান

অন্যদৃষ্টি অনলাইন
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১১ অপরাহ্ন

ণত্ববিধান

মোঃ মঈন উদ্দীন।।

১। প্রশ্ন- ণত্ববিধান কাকে বলে?

উত্তর – যে বিধান বা নিয়ম অনুসরণে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে ‘ ণ ‘ (মূর্ধন্য- ণ) ও ‘ ন ‘ (দন্ত্য – ন) এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় তাকে ণত্ববিধান বলে।

২। ণত্ববিধান কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর – ণত্ববিধান ২ প্রকার। যথাঃ-(ক) স্বাভাবিক ণত্ববিধান ও (খ) নৈমিত্তিক ণত্ববিধান।

(ক) স্বাভাবিক ণত্ববিধান : অনেক ক্ষেত্রে ‘ ণ ‘- এর ব্যবহার স্বাভাবিক অর্থাৎ ণত্ববিধানের প্রয়োগ ছাড়াই ‘ ণ ‘ ব্যবহৃত হয়। ‘ ণ ‘- এর এ স্বাভাবিক ব্যবহারকে স্বাভাবিক ণত্ববিধান বলা হয়। যেমন- কল্যাণ, লাবণ্য, বেণু, রেণু, অণু ইত্যাদি।
(খ) নৈমিত্তিক ণত্ববিধান : অনেক ক্ষেত্রে ণত্ববিধান প্রয়োগের ফলে দন্ত্য ‘ ন ‘ মূর্ধন্য ‘ ণ ‘ তে পরিণত হয়। ণত্ববিধান অনুসারে ‘ ন ‘- এর ‘ ণ ‘- তে পরিণত হওয়াকে নৈমিত্তিক ণত্ববিধান বলে। যেমন- উত্তরায়ণ, প্রণাম, পরিণয়,প্রমাণ ইত্যাদি।

ণত্ববিধানের নিয়মাবলি

সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষায় যেসব শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সেগুলোর কোথায় ‘ ণ ‘ এবং কোথায় ‘ ন ‘ ব্যবহৃত হয় তার কতগুলো নিয়ম বা বিধান রয়েছে।

১। ট – বর্গের দন্ত্য – ন মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – কণ্টক, বণ্টন, কুণ্ঠা, ঘণ্টা, নিষ্কণ্টক, আকণ্ঠ, কণ্ঠহার, উৎকণ্ঠা, নীলকন্ঠ, ভূলুণ্ঠিত, কণ্ঠস্থ, অবগুণ্ঠন, খণ্ড, ভাণ্ডার, মুখমণ্ডল, পণ্ডশ্রম, ভূখণ্ড, পণ্ডিত, পরিমণ্ডল, ঠাণ্ডা, প্রাণদণ্ড, প্রচণ্ড, প্রকাণ্ড, বাগবিতণ্ডা, বায়ুমণ্ডল, গণ্ডমূর্খ, পাণ্ডুলিপি, পাণ্ডিত্য, কূপমণ্ডূক, লুণ্ঠন, দণ্ড, ভণ্ড ইত্যাদি।

২। ঋ, র, ষ -এ কয়টি বর্ণের পরে মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – ঋণ, তৃণ, অরণ্য, ধারণা, নিবারণ, অলংকরণ, তরুণী, আবরণ, কিরণ, সংস্করণ, সাধারণ, আহরণ, চরণ, প্রতারণা, পূরণ, স্মরণ, বর্ণ, পূর্ণিমা, জীর্ণ, উদগীরণ, চূর্ণ, পূর্ণ, বর্ণনা, কর্ণ, ভাষণ, ক্ষণ ইত্যাদি।
৩। প্র, পরা, পরি, নির – এ চারটি উপসর্গের পর এবং অন্তর্ শব্দের পরবর্তী নম্, নশ্, নহ্, নদ্, নু, নী, অন, হন – ধাতুর দন্ত্য – ন মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – প্রণাম, পরিণতি, প্রণয়, প্রণাশ, পরিণয়, নির্ণয় ইত্যাদি।

৪। মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও সমাসবদ্ধ কয়েকটি শব্দের দন্ত্য – ন মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – অগ্রণী, গ্রামীণ ইত্যাদি।
৫। প্র, পরা, পূর্ব ও অপর – এ চারটির পরবর্তী অহ্ন শব্দের দন্ত্য -ন মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – প্রাহ্ণ, পরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ ইত্যাদি।
৬। পর, পার, উত্তর, চান্দ্র, নার, রাম শব্দের পর ‘ আয়ন ‘ প্রত্যয়ের দন্ত্য – ন মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – পরায়ণ, উত্তরায়ণ, নারায়ণ, রামায়ণ ইত্যাদি।

৭। উসর্গজাত র – এর প্রভাবে প্রত্যয়পর দন্ত্য – ন মূর্ধন্য – ণ হয়ে যায়। যেমন – প্রয়াণ, প্রমাণ ইত্যাদি।
৮। ঋ, র, ষ – এর পর স্বরধ্বনি, ক – বর্গ, প – বর্গ এবং য, য়,ব, হ, ং ( অনুস্বার) থাকলে তার পরবর্তী দন্ত্য – ন মূর্ধন্য – ণ হয়। যেমন – কৃপণ, হরিণ, অর্পণ, ব্রাহ্মণ, দর্পণ, গ্রহণ, শ্রবণ ইত্যাদি।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com