নওগাঁয় ফুটপাতে কাজ করে এক দরিদ্র বাবা মেয়েদের পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে

আর আর চৌধুরী, নওগাঁ
শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ৭:২৬ অপরাহ্ন

ফুটপাতে কাজ করেই নওগাঁর এক দরিদ্র বাবা তার ৫ মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। দরিদ্র বাবার সপ্ন তার দু মেয়ে সু-শিক্ষা শেষে দেশের সেবায় নিয়োজীত হবেন।

মেয়েদের নিয়ে সপ্ন দেখা গোপাল রবিদাশ’র কর্মস্থল ফুটপাত, দরিদ্র এক চর্মকার সে।

তিনি খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে একটি কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে বসেই প্রতিদিন যে সামান্য আয়-রোজগার করেন, সেই সামান্য আয় থেকে ৭ জনের পরিবার সংসার চালানোর পাশাপাশি তিনি আগামীতে তার মেয়েদের দেশের সেবায় নিয়োজীত করতে চান বলেই দু মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।

বাবার হাতে খড়িতে শেখা পেশা, ফুটপাতের পাশে থাকা বৃক্ষের গোড়ায় বসে গোপাল রবিদাশ বুকের ব্যাথা মুখের হাসিতে ঢেকে চপ্পলটি সোজাসোজি ধরে নিজের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চেপে নেয় আর সেই সাথে সূচ গেঁথে তার নিপূণ হাতের ছোঁয়াই সুতা পেচিয়ে বার কয়েক এফোঁড় অফোঁড় করে চপ্পলটি তুলে দেয় গ্রাহকের হাতে।বিনিময়ে গোপাল রবিদাশ পায় মাত্র পাঁচ টাকা বা ১০ টাকা। এছাড়া এক জোড়া পালিশে পান ১৫-২০ বা ২৫ টাকা।

এমনও দিন যায় দুপুরে না খেয়ে সারাদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে কোমড়ে বাঁধা তবিলটি খুলে পাঁচ টাকার কয়েন আর কয়েকটি দশ টাকার নোট, হিসাব কষে দেখা যায় দুইশত থেকে তিনশত টাকা। এই স্বল্প আয় দিয়েই চলে গোপাল রবিদাশের সাত সদস্যসের সংশার। গোপাল রবিদাশের বাড়ি নওগাঁ জেলা সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামে (মহল্লায়), রবিদাশের এক স্ত্রী ৫ মেয়ে, তবে ইতিমধ্যেই ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন রবিদাশের বয়স ৬৫ বছরের কাছাকাছি তারপরও তিনিই পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। এজন্যই এবয়সে এসেও তিনি তার পূর্বের পেশা কাজ করছেন। তবে আগের মতো আর জোড় দিয়ে কাজ করতে পারেন না তিনি। যার কারনে আয় রোজগার কম হয়।

তারপরেও তিনি তার দু মেয়েকে সুশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন, মেয়েরা দেশের সেবায় নিয়োজীত হবেন বলেই সপ্ন দাখেন। যাতে মেয়েরা দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে সেই আশায় রয়েছেন রবিদাশ।

গোপাল রবিদাশ জানান, আমার এক মেয়ে ঢাকা শহরের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বি. এস. সি ইনজিনিয়ার লাইনে পড়ছে এবং ছোট মেয়েটি নওগাঁ মহিলা কলেজে বি এ পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার অভাবের পরিস্থিতি দেখে ঢাকা শহরে পড়ুয়া মেয়েটি নিজেই লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি কাজ নিয়ে পড়ার খরচ জোগাড় করেন তার সাথে হামিও কিছু সহযোগীতা করেই মেয়েটি লিখাপড়া করছে। বলতে পারেন  অনেক কষ্টকরে হলেও আমি চাই আমার দুটি মেয়ে যেন আগামীতে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজীত হতে পারেন এজন্যই আমি কষ্ট করছি। জানিয়ে তিনি বলেন, থাকার বাড়ি (টিনের ছাপড়া ঘড়) সেটির টিনগুলোও নষ্ট হয়ে পড়েছে বর্ষা মৌসুমে পানি পরার কারনে নির্ঘুম বসে থেকে রাত পার করি, তারপরও আমি চাই আমার দু মেয়ে শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবায় যেন নিয়োজীত হোন বলেই আমি কষ্ট হলেও হাঁসি মুখে মেয়েদের সামনে চলাফিরা করি।

গোপাল রবিদাশ তার সপ্ন পূরন করতে পারবেন কিনা, তবে সরকার তথা বে-সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান যদি সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন তবেই গোপাল রবিদাশ তার সপ্ন পূরনে সফল হতে পারেন বলেই মনে করছেন স্থানিয় সচেতন মহল।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com