বর্তমান সরকার-দলের কঠোর বিরোধী পক্ষও নিঃসংকোচে স্বীকার করবেন যে, অদম্য অগ্রগতিতে উন্নয়ন অভিযাত্রায় সড়ক-যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ সড়ক সম্প্রসারণ-নতুন সড়ক নির্মাণ-সড়ক প্রশস্তকরণে আধুনিক-যুগোপযোগী পরিকল্পনায় যথার্থ সার্থক-নান্দনিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। দেশকে বিশ্বপরিমণ্ডলে মর্যাদাসীন করার ক্ষেত্রে উল্লেখ্য উদ্যোগ অতুলনীয় অভিধায় অভিষিক্ত।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এর বিপরীতে কঠিন এক জীবন সংহারের দৃশ্যপটও নির্মিত হয়েছে। যান-পরিবহণ দুর্ঘটনা যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রাণ নিধনের দুর্বিষহ প্রতিযোগিতায় নেমেছে; পুরো জাতি এতে চরম বিচলিত-আশঙ্কাগ্রস্ত। ঘর থেকে বেরোনোর সময় কেন যেন এক অজানা মৃত্যুভয় ছায়ার মতো মনের অগোচরে বাসা বেঁধে চলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রাণপণ প্রচেষ্টায়ও এর পরিত্রাণে কার্যকর কোনো সুফল দৃশ্যমান নয়। দোষারোপের তর্জনী ইঙ্গিতে সংকট দূরীভূত হওয়ার পরিবর্তে আরও যেন ভয়াবহতায় প্রতিফলিত হচ্ছে। বিভিন্ন ছাত্র-জনতার আন্দোলন-সংগ্রামেও রাজপথ কম্পিত হয়েছে। জনগণ আর বাচনিক কোনো অঙ্গীকারে নয়; প্রায়োগিক পন্থা অবলম্বনে এ সংকটের আশু সমাধান প্রত্যাশা করছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রামের চকরিয়ায় বাবার শ্রাদ্ধকর্ম শেষে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৫ ভাইয়ের মৃত্যুর মর্মস্পর্শী ঘটনা দেশবাসীকে প্রচণ্ড মর্মাহত করেছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাস্তা পার হওয়ার সময় কক্সবাজারমুখী দ্রুতগামী নম্বরবিহীন একটি পিকআপের চাপায় তাদের মৃত্যু হয়।
৯ জানুয়ারি ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন সূত্রমতে, ২০২১ সালে দেশব্যাপী সংঘটিত ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬ হাজার ২৮৪ এবং আহত হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৮ জন। নিহতদের মধ্যে ৮০৩ জন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এই হিসাবে গত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৩ শতাংশই শিক্ষার্থী। শুধু মে মাসে সর্বাপেক্ষা ৮৪ জন এবং জুন মাসে সবচেয়ে কম ৫৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। এদের বড় অংশ নিহত হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ এবং প্রায় ১৭ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সময় গত বছর কয়েক ধাপে পুরো দেশে কঠোর বিধিনিষেধকালে মোট ৮৫ দিন গণপরিবহণ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন। সংস্থাটির মতে, প্রতিদিন সড়কে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের বেশি মানুষের। আর ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৮৫ দিন গণপরিবহণ বন্ধ থাকার বিষয়টি হিসাবে নেওয়া হলে দৈনিক গড় মৃত্যুর হার দাঁড়ায় ২২ জনের বেশি।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায় ২ হাজার ২১৪ জন। ২০২০ সালের তুলনায় যা বেড়েছে ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং প্রাণহানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। নিহতদের অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো ও ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমান নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি।
২০১৯ সালের ২০ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫৪টি। বিপরীতে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৯০৩টি। অর্থাৎ সড়কে অবৈধভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৫১ জন চালক। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য পত্রপত্রিকায় আসে না।
গণমাধ্যমে যে পরিমাণ তথ্য প্রকাশিত হয়, প্রকৃত দুর্ঘটনা তার চেয়ে চার বা পাঁচ গুণ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে শুধু কমিটি গঠন এবং সুপারিশ করার চক্র থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। এসবের চেয়ে বেশি প্রয়োজন জনবান্ধব পরিবহণ কৌশল প্রণয়ন করা।’
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজার ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। বিআরটিএ’র হিসাবে প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০ জন প্রাণ হারায়। সে হিসাবেও বছরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮০০ জন। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বছরে ১২ হাজার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ২০ হাজার মানুষ প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত ‘ডেলিভারিং রোড সেফটি ইন বাংলাদেশ : লিডারশিপ প্রায়োরিটিস অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভস টু ২০৩০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার অনেকাংশেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে দুর্ঘটনাকবলিত প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে মারা যায় ১০২ জন।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকায় এ সংখ্যা যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৭০, ১৩, ৪০ ও ৭ জন। যদিও বাংলাদেশে প্রতি হাজারে যানবাহন আছে মাত্র ১৮ জনের। ভারতে এ সংখ্যা ১৫৯, নেপালে ৮১, ভুটানে ১০৯ ও শ্রীলংকায় ৩২৭। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনের দুর্ঘটনায় গড়ে ২ জন সাইকেল চালকের মৃত্যু হয়। দুই বা তিন চাকার মোটরযানের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা ১১ দশমিক ২০, গাড়ি ও হালকা যানের ক্ষেত্রে ১৩ দশমিক ৩০ জন গাড়ি চালক ও ২৮ দশমিক ৬০ জন যাত্রী। আবার ট্রাক চালকদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৬ দশমিক ১০, বাস চালকদের ক্ষেত্রে ৮ দশমিক ২০ বাস যাত্রীর সংখ্যা ২৮৬ দশমিক ৬০ জন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ র্যাংকিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। ৬১ দশমিক ৯০ শতাংশ মৃত্যুহার নিয়ে সবচেয়ে অনিরাপদ রাস্তার তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুহার ২ দশমিক ৩১ শতাংশ হার নিয়ে সর্বাপেক্ষা নিরাপদ সড়কের তালিকায় শীর্ষে আছে সুইডেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ দেশের জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ৯৩ শতাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে বিশ্বের মোট সড়ক যানের ৬০ শতাংশ থাকা স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বিভিন্ন সংস্থা-মহল কর্তৃক চিহ্নিত কারণগুলো হচ্ছে-চালকের অসাবধানতা-অদক্ষতা ও লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, রাস্তার স্বল্পতা-অপ্রশস্ততা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের চলাচল, প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাড়ি চালানো ও ওভারটেকিং, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা, রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা, ওভারব্রিজের স্বল্পতা, সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতা, ফুটপাত হকারদের দখলে থাকা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার ও স্থাপনা, যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, অতিরিক্ত মাল ও যাত্রী বোঝাই, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পথ অবরোধ-সভা ও হরতালসহ প্রভৃতি কারণে সৃষ্ট যানজটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত হওয়া, সড়ক পরিবহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থা-প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা ইত্যাদি। ২০২১ সালে সংঘটিত দুর্ঘটনার ৬২ শতাংশের কারণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি বলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের উপরোল্লেখিত প্রতিবেদনে উপস্থাপিত হয়েছে।
বর্তমানে আমরা খবরের কাগজ, টিভি খোললেই দেখতে পাই দেশের কোনো না কোনো স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। সড়ক দুর্ঘটনার ফলে প্রতি বছর হাজারো মানুষ নিহত হয়, যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবার গুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। এই আর্টিকেলটিতে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণগুলি উল্লেখ করবো:
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সমূহ: অত্যধিক আত্মবিশ্বাস, মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অননুমোদিত ওভারটেকিং, বিভিন্ন স্টান্ডে অযথা সময়ক্ষেপন পিছনের গাড়ী আসার সাথে সাথে খুব দ্রুতগতিতে গাড়ী টান দেয়া, মাদক সেবন করে গাড়ী চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, অপ্রশস্ত রাস্তা, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা,
জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানো, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়:
বেপরোয়া গতি ও অননুমোদিত ওভারটেকিং থেকে বিরত থাকা। ফিটনেস ও সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো থেকে বিরত থাকা। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকা। ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ করা অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন এর ক্ষেত্রে সচেতন থাকা। পথচারীদের উচিত সতর্কভাবে চলাফেরা করা। সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকের কথা বলা থেকে বিরত থাকা। বর্তমান সমাজে ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে।
যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারীকে রুখে দিতে পারে।
বাংলাদেশের তিন ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান। (ক) সড়ক পথ, (খ) নৌপথ এবং (গ) আকাশপথ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে। এছাড়া রয়েছে রেলপথ। রেলপথে ব্রডগেজ, মিটারগেজ এবং ডাবলগেজ এ তিন ধরণের পথই আছে।
এছাড়া নৌপথ ও আকাশপথ দেশের অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবিশ্বে যোগাযোাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সড়কপথের যোগাযোগ সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাই এই পথের গুরুত্ব অনেক বেশি।
প্রতিদিন টিভি ও সংবাদপত্রে যে খবরটি অনিবার্য তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে। এছাড়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এমন কি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে রাস্তার অলিতে-গলিতে।
নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো-
অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং: সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা হয়। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে।
অপ্রশস্ত রাস্তা: বাংলাদেশের অধিকাংশ রাস্তাই অপ্রশস্ত। যার ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ঢাকা থেকে যাতায়াতের সবচেয়ে ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। এই রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্ত নয়। ফলে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা ও হতাহত বেশি হয়। তাছাড়া দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানোই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে যাতে জীবনহানি না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পরিবার সবসময়ই চায় আপনি এবং আপনার প্রিয় গাড়ি দুটোই থাকুক নিরাপদ।
০১. সিট বেল্ট বাঁধা
নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গাড়ির সিট বেল্ট বাঁধা। প্রত্যেকটি দেশেই সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালান।অবশ্যই মনে রাখবেন, শুধু আপনি নন আপনার সঙ্গে থাকা যাত্রীদেরও সিট বেল্ট বাঁধতে বাধ্য করবেন। সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালানো এবং গাড়িতে চড়া দুটোই নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
০২. মনোযোগ
নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য যা প্রয়োজন আপনার মনোযোগ। আপনি যখনই গাড়ি চালাবেন খেয়াল রাখবেন আপনার মনোযোগ যেন গাড়ি এবং রাস্তার দিকেই থাকে। কখনই গাড়ি এবং রাস্তা থেকে মনোযোগ সরাবেন না। একটু অমনোযোগী ড্রাইভিংয়ের কারণে ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
০৩. অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালক
অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালক দিয়ে কখনোই গাড়ি চালানো ঠিক নয়। কারণ বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে অদক্ষ চালকের জন্য। তাই এক্ষেত্রে গাড়ির মালিদের সচেতন হতে হবে।
০৪. রোড স্ক্যানিং বা রাস্তা বিশ্লেষণ
রাস্তা বিশ্লেষণ বা রোড স্ক্যানিং নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন গাড়ি চলাবেন তখন অবশ্যই আপনার চলার রাস্তাটিকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করবেন। গাড়ি চালানোর সময় রাস্তা-সম্পর্কিত যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে সেগুলো হলো- রাস্তায় গাড়ির পরিমাণ, রাস্তার লেনের পরিমাণ, রাস্তার গঠনগত অবস্থা, রাস্তার প্রশস্ততা।
০৫. গাড়ির গতিসীমা
গাড়ি চালানোর সময় কখনই হুটহাট করে গাড়ির গতিসীমা বাড়াবেন বা কমাবেন না। হুটহাট গাড়ির গতি বাড়ানো বা কমানো প্রায়শই বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই যতদূর সম্ভব এই বিষয়টি মেনে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করবেন।
০৬. কথা বলা থেকে বিরত থাকুন
গাড়িতে চড়ে অনেক যাত্রী আছেন যারা ভাড়া ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যান- এটি কোনোভাবেই ঠিক নয়। গাড়ি চলানোর সময় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
০৭. প্রতিযোগিতা
অনেক সময় প্রতিযোগিতা করে অনেক ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই ঠাণ্ডা মাথায় গাড়ি চালান। আর মনে রাখবেন আপনি গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতায় নামেননি, নিরাপদে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে গাড়ি চালাচ্ছেন।
০৮. লুকিং গ্লাস
প্রত্যেকটি গাড়ির দুটি লুকিং গ্লাস থাকে। একটি ডান হাতের পাশে আরেকটি বাম হাতের পাশে। গাড়ি চালানোর সময় লুকিং গ্লাস দেখা জরুরি। কারণ আপনার পাশ দিয়ে কোন গাড়ি যাচ্ছে- তা আপনি সহজেই দেখতে পারবেন। আর নিরাপদে গাড়ি চালাতে পারবেন।
০৯. নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না
গাড়ি চালানোর সময় চালক নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বাসের দুর্ঘটনার কারণ নেশাগ্রস্ত চালক। তাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না।
আমাদের দেশে- অপর্যাপ্ত সড়ক অবকাঠামো, বেপরোয়া গাড়ি চালক, সনদহীন যানবাহন, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা এমন অনেক কারণেই সড়ক দুর্ঘটনায় আজ অকালমৃত্যুর বড় মাধ্যম। সমস্যাগুলো সমাধানে দেশের কর্তৃপক্ষ বেশি উদাসীন, মৃত্যুর মিছিলও বাড়ছে।
লেখক: প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়
সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, গোদাগাড়ী উপজেলা শাখা, রাজশাহী।