প্রমাণিত হলো যে, বেসরকারি শিক্ষকদের মান – মর্যাদা এখন গবেষণা,কারিকুলাম এবং নতুন নতুন প্রজ্ঞাপন, এমপিও নীতিমালা সংশোধন ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা চলছে।
মন্ত্রী, সচিব ও সরকার গত ১৯ বছরে একবারও ভাবলো না এন্ট্রি লেভেলের একজন শিক্ষক ৩১২৫ টাকা উৎসব ভাতা পেয়ে কিভাবে ঈদ আনন্দ পরিবার – পরিজন নিয়ে নিয়ে উদযাপন করবে; এমনকি এমপিওভুক্ত শিক্ষক – কর্মচারী কারো পক্ষেই সুন্দরভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা মোটেও সম্ভব নয়। আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষক – কর্মচারী সমাজ কি এখনো বুঝতে পারলামনা, আমরা যারা যে সংগঠন করি তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সত্যি সত্যিই সধারণ শিক্ষক – কর্মচারীদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কর্মসূচি পালন করছে কি-না? তাছাড়া আন্দোলন যারাই করে তাদের আন্দোলনটা শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষে হচ্ছে কি-না?
যদি পক্ষে হয়ে থাকে তাহলে সেখানে গিয়ে আমি /আমাদের সমর্থন দিতে অসুবিধা কোথায়? আমরাতো জানি, ” আল্লাহ তাদেরকেই সহযোগিতা করেন যারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে নিজেরা চেষ্টা করে।”সম্মানীত শিক্ষকদেরকে বেশি জ্ঞান দেয়া বেশি শোভনীয়ও নয়।
আমরা মহাজোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ৪৪ দিন অবস্থান ও প্রতীকী অনশনের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলন করে নতুন কর্মসূচি দিয়ে ঘরে ফিরলাম , এখন অনেক সংগঠন প্রশ্ন তুলছে আসলে আমরা কি পেলাম? আন্দোলনে সাহায্য করতে কুন্ঠা বোধ করলেও প্রশ্ন ও সমালোচনা করতে মোটেও কুন্ঠা বোধ হচ্ছ না। শুধু সমালোচকদের বলতে চাই, মহাজোট স্বাধীনতার পর জাতীয়করণের জন্য টানা ৪৪ দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করেছে, আপনি / আপনারা পারলে আরও ৪৪ দিন আন্দোলন করে দেখান।
অত:পর মহাজোট আরও ১০০ দিনের কর্মসূচি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবে ইনশাআল্লাহ। কোনো আন্দোলনই কখনও বৃথা যায় না। মহাজোট জাতীয়করণের বীজ বপন করেছে, আগামী আন্দোলনের জন্য মোজাহিদ তৈরি করেছে, সরকারের সর্বত্র জাতীয়করণের দাবি পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী বাজেটে তার প্রভাব থাকবে। অতি দলবাজ কোনো এক নেতা শিক্ষামন্ত্রীর কান মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভারি করেছে যার জন্য আমরা সরাসরি সরকার পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা পাইনি। রাজপথে আমাদের আন্দোলনের পর সরকার যখন কোনো ঘোষণা বা পরিপত্র দেয় তখন ঐ অতি দলবাজ নেতা ঘোষণা করবে, আমি পর্দার অন্তরালে কাজ করে দাবি পূরণ করে দিলাম।
প্রিয় শিক্ষক সমাজ আপনারা খেয়াল করুন, ২০১৮ সালে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২০দিন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের জন্য অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩ জন সচিব পাঠিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক – কর্মচারীদের জন্য বার্ষিক ৫% প্রবৃদ্ধি ও ২০% বৈশাখী ভাতা ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখ শেষ বিকালে ঘোষণা করে শরবত পানের মাধ্যমে আমাদের অনশন ভাঙ্গান। তারপর অন্যান্য সংগঠনগুলো ১৫ ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন করতে আসলে একনেতা ১৪ ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার হন, রাতে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে দিয়ে মুক্তি নেন যে ১৫ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলন সমাপ্তি করবেন এবং তা-ই করলেন।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষকগণ সেদিন পানিভর্তি বোতল নেতাদের গায়ে মেরেছেন এবং নেতারা প্রেসক্লাব চত্বর ছেড়ে পালিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষকগণ তখন একটি সংগ্রাম কমিটি ঘোষণা করে বাড়ি ফিরে গেছেন। আর ঐ অতি দলবাজ নেতা পরে ঘোষণা করেছেন, আমি সরকারকে অতিরিক্ত ৪% কর্তনের ঘোষণা দিয়ে আপনাদের দাবি পূরণ করে এনেছি। এই শিক্ষক নেতাগুলো শিক্ষকদের মাথা বিক্রি করে নমিনেশন নিয়ে এখন এমপি হতে চায়।
আজ ৬০ হাজার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী তাদের অবসর-কল্যাণের টাকার জন্য দিশেহারা, এখন তাদের পাশে কেউ নেই। সরকার বয়স্ক ভাতা বিধবা ভাতাসহ আরও কত ধরনের ভাতা এদেশের মানুষের জন্য চালু করেছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ জীবন-যৌবন শেষ করেছে সরকারের আদেশ মেনে এবং এদেশের মানুষের সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়েছে। আজ শিক্ষকদের অবসর-কল্যাণের ঘাটতির টাকা কেন জাতীয় বাজেট থেকে আসছে না তার প্রশ্ন আমি সরকারের কাছে রাখলাম এবং জোর দাবি জানালাম, প্রতি বছর জাতীয় বাজটে অবসর-কল্যাণের ঘাটতি টাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হউক।
জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষে কাজ করছে এবং করবে। ইতোমধ্যে আমরা যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছি এগুলোর সফল বাস্তবায়নে সাধারণ শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা চাই।
লেখক
সদস্য সচিব
এমপিওভুক্ত শিক্ষক – কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট।