শরীয়তপুরে প্রধন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোর অভিযোগ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩

শিক্ষার্থীদের বাড়ীতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজকরানোর অভিযোগ শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪২ নং তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুনের বিরুদ্ধে।

প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন ছাত্রীদের নিজের বাড়িতে নিয়ে ঘর বাড়ি ঝাড়ু, বাথরুম পরিষ্কার, যাবতীয় কাজ কর্ম করিয়ে থাকেন। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুনের বিরুদ্ধে রয়েছে  নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে নিজের বাড়িতে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, বাথরুম ও বাগানের গাছ পরিষ্কার করাসহ বিভিন্ন কাজ করান। এসব বিষয়ে অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষিকার কাছে জানতে চাইলে তাদের গালমন্দ  করে তাড়িয়ে দেন ।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন আফসানা বেগম নামে এক অভিভাবক। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষিকার অপসারণের দাবিতে শতাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী এক হয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন।

এ বিষয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিসান, মোসকান, মিলন, সাফিয়া ও খালিদ হাসানসহ একাধিক ছাত্রছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রাইভেট পড়তে ম্যাডামের বাসায় যাই। কিন্তু তিনি আমাদের দিয়ে তার বাসায় কাজ করান। আমাদের দিয়ে ওনার বাগান, ওয়াশরুম ও পানির টাংকি পরিষ্কার করান। এমনকি মেয়েদের ঘর ঝাড়ু ও মুছতে বলে। আমরা কাজ না করতে চাইলে আমাদের মারধর করে এবং পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখায়। তার থেকে গাইড না কিনলে তিনি আমাদের বকাঝকা করে। ৫০০ টাকার গাইড ৭০০ টাকা নেয়। এই জন্য আমারা এই স্কুলে আর পড়তে চাই না।

অভিভাবক আবু কালাম প্রধানিয়া বলেন, আমার ছেলে স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আমার ছেলেকে দিয়ে প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন জোর করে ওয়াশরুম পরিষ্কার করিয়েছেন। এ ধরনের আচরণের জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার বাচ্চাকে এই স্কুল থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাব।

স্কুল কমিটির সভাপতি সামিম আহমেদ সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষিকার কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ২০০৯ সালে ফাতেমা খাতুন স্কুলের দায়িত্বে আসার পর থেকে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

স্কুল কমিটির সভাপতি আরও বলেন, এর আগে তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা নিয়ে তার গেছে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তার আচরণে সবাই বিরক্ত এলাকাবাসীর ক্ষোভ আরও বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার কোনো মানুষই তাকে আর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, স্থানীয় কিছু মানুষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট। আমি এই ধরনের কাজে কখনোই জড়িত ছিলাম না।

এ বিষয়ে জানতে ভেদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান মুন্সী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন দুই-এক দিনের মধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


এ বিষয়ে আরো সংবাদ

Categories