রাজশাহীতে গৃহবধূ আঁখি হত্যাকান্ড নিয়ে পুলিশের তেলেসমাতি

হাবীব জুয়েল
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩

গত ১৫/০৫/২০২৩ ইং তারিখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গৃহবধূ আঁখিকে মৃত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান মৃত গৃহবধূ আঁখির স্বামী টনি ও তার পরিবার। এ নিয়ে রাজশাহী মহানগরীর কাঠাঁলবাড়িয়া এলাকায় গৃহবধূ আঁখি হত্যার ঘটনায় এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তসের । হত্যাকান্ডের মূল আসামীরা ধরা না পড়ায় এক পর্যায়ে ক্ষ্রীপ্ত এলাকাবাসী হত্যাকারী

আতিকুল ইসলাম টনির বাড়িতে আগুন দিতে উদ্ধত হয়। কিন্তু এলাকার সুশীল সমাজের হস্তক্ষেপে অবশেষে ক্ষ্রিপ্ত এলাকাবাসীকে শান্ত হয়। কিন্তু হত্যা মামলা এজাহারে গিয়ে হয়ে যায় প্ররোচনায় আত্মহত্যা মামলা। ফলে পুরো কেসের মোটিভ ঘুরে যায় অন্যদিকে।

উল্লেখ্য যে, রাজশাহী কাঠাঁলবাড়িয়া এলাকার মাহজুবা খাতুন আখিঁর সাথে প্রায় ৩ বছর পূর্বে বিয়ে হয় একই এলাকার ডিস লাইন কর্মচারী আতিকুল ইসলাম টনির। কিন্তু গত ১৫/০৫/২০২৩ ইং তারিখে রাত আনুমানিক ১১.৪৫ মিনিটের দিকে স্বামী আতিকুল ইসলাম টনি আখিঁকে বেধড়ক পেটানোর এক পর্যায়ে মৃত্যু বরন করেন গৃহবধূ আঁখি। এরপর মৃত আখিঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ফেলে রেখে চলে যান স্বামী  টনি, টনির বাবা বাদশা ড্রাইভার এবং  টনির মা পলি খাতুন। এরপর থেকেই নিরুদ্দেশ আছে টনির পরিবার। টনির বাড়িও  বাড়ি তালাবন্ধ। এ বিষয়ে রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করতে যান মৃত আখিঁর বাবা আরসাদ আলী। যাহার মামলা নং ১৩ এবং তারিখ ১৫/০৫/২০২৩ ইং। ধারা ৩০৪/৩০৬ পেনাল কোড ১৮৬০ দণ্ডবিধি। (The Penal code,1860)

এদিকে হত্যাকারী টনির পরিবারকে গ্রেফতার না করায় আতংকে রয়েছেন মৃত আখিঁর পরিবার। কেননা টনি মৃত আখিঁর পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে বলে জানায় মৃত আখিঁর পারিবারিক সূত্র।  অপরদিকে রাজশাহী কাশিয়াডাঙ্গা এলাকাসহ কাঠালবাড়িয়া এলাকায় আতিকুল ইসলাম টনির বিষয়ে খোঁজ নিতে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে।

অত্র এলাকার ৮৩ বছর বয়স্ক মান্নান গনমাধ্যম কর্মীদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান – টনি আগে থেকেই বখাটে ছেলে। এলাকায় বিভিন্ন মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার পরিপ্রেক্ষিতে টনির সামাজিকভাবে কয়েকবার বিচারও হয়েছে। এছাড়াও সে মাদকাসক্ত।

৬৫ বছর বয়স্ক আমেনা বিবি জানান- টনি ভালো ছেলে নয়। সে নেশাপানি করত। আর রাত হলেই বঊকে পেটাতো। এছাড়াও টনির মা পলিও মাঝে মধ্যেই আঁখিকে গরম ছন্নি দিয়ে শরীরের কয়েক জায়গা ছ্যাঁকাও দিয়েছিল। আখিঁ খুব ভালো মেয়ে ছিল বলেই এগুলো নির্যাতনের কথা তার বাড়িতেও বলতনা। আমি আখিঁর হত্যাকারীদের বিচার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক মেম্বার বলেন – আঁখি খুব ভালো মেয়ে ছিল কিন্তু স্বামী টনি ও তার মা প্রচন্ড নির্যাতন চালাতো। আমি টনিকে সতর্ক করেছিলাম কিন্তু তাও তারা কথা শোনেনি।

রাজশাহী মহানগরীর তরুন প্রজন্মের বর্ষসেরা করদাতা, সমাজসেবক, ক্রীড়ানুরাগী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুখলেসুর রহমান মুকুল বলেন – আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা আশাবাদী, গৃহবধূ আঁখি হত্যাকান্ডে পুলিশ কোন কালক্ষেপন না করে দ্রুত অপরাধীদের ধরতে উদ্যোগ গ্রহন করবে। এছাড়াও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ইউনিট এখন অনেক শক্তিশালী। বিধায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তাও প্রকৃত আসামীদের দ্রুত ধরে বিচারের মুখোমুখি করবে বলে আমি আশাবাদী।

রাজশাহী জেলা জজ কোর্টের এডভোকেট শাফি বলেন – নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’ প্রকল্পের আওতায় দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) ও ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি–সেল) রয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রকল্পটি পরিচালিত হয়। ওসিসি ও ওসিসি–সেলে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন এবং দগ্ধ—এ তিন ধরনের সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের চিকিৎসা, ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। ওসিসি সেলের মাধ্যমে পুলিশ ও আইনি সহায়তা, কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। বিধায় কোন নারী  যে কোন ভাবেই নির্যাতিত হলে সকলের উচিৎ সরকার পরিচালিত এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সেবা।গ্রহন করা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় উপদেস্টা এড. সালেহা নাজনীন বলেন – রাজশাহীতে সম্প্রতি নারী নির্যাতন ও নারী হত্যার সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপতৎপরতাকেই দ্বায়ী করা যেতেই পারে। সেই সাথে সামাজিকভাবে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধিও করতে হবে।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


এ বিষয়ে আরো সংবাদ

Categories

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: