নওগাঁয় “নগদ অ্যাকাউন্টে” আসা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উধাও

নওগাঁ প্রতিনিধি
বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের “নগদ অ্যাকাউন্টে” আসা উপবৃত্তির টাকা উধাও হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্টে টাকা নেই।

ফলে তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নগদ কোম্পানিতে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি দুর্বৃত্তের দল এই টাকা তুলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। তবে এই বিষয়ে দায় নিচ্ছেন না প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নগদ কর্তৃপক্ষ। এতে করে চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার একশত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসাবে উপবৃত্তি পেয়ে আসছে।

গত বছরের উপবৃত্তির টাকা চলতি মাসে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এবার ৬ মাস পর উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী কিট এলাউন্স হিসাবে এক হাজার টাকা এবং প্রতি মাসের বৃত্তি হিসাবে একশত পঞ্চাশ টাকা করে ১ হাজার ৯ শত টাকা স্ব স্ব অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে “নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে” প্রেরণ করা হচ্ছে।

এবার উপজেলার প্রতিটি স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মোবাইল থেকে উপবৃত্তির টাকা উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলার রাতোয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক রহিদুল ইসলাম রাইপ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না অনেকেই। মিনি স্টেটমেন্ট এ গিয়ে দেখা যায় ক্যাশআউট হয়ে গেছে। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর কিট এলাউন্সের ১ হাজার, ছয় মাস উপবৃত্তির ৯ শত টাকা এ্যাকাউন্ট থেকে অটো ভাবে উধাও।

বহুবার চেষ্টার পর টাকা উঠানোর হেল্প লাইনের পরম কৃপায় পিন রিসেট করে ব্যালেন্স চেক করতে গিয়ে দেখি ব্যালেন্স শুন্য, কোন টাকা নেই। হারিয়ে যাওয়া এই টাকা প্রাপ্তির জন্য নগদ অপারেটরের এজেন্ট আর স্কুলে ঘুরতে ঘুরতে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছে আমার মতো শত শত অভিভাবকরা। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ বলছেন ক্যাশ আউট হয়ে গেছে আমরা কি করবো। এখন দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই কথা বললে আমরা কোথায় যাবো.?

উপজেলার মালশন গিরিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক আব্দুল মজিদ, নাজু, ভাটকৈ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক মৌসুমী আক্তারসহ অনেকেই বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ। আমরা এতো জটিলতা বুঝি না। ম্যাসেজ পাওয়ার পর আমি ছেলের উপবৃত্তির টাকার ম্যাসেজ মোবাইলে না পেয়ে স্কুলে যোগাযোগ করি। স্কুল থেকে বলা হয় ম্যাসেজ না পেলেও সমস্যা নেই নগদ অপারেটরের এজেন্টের নিকট যোগাযোগ করুন। আমরা সেখানে যোগাযোগ করি। প্রথমে তারা বলে না টাকার কোন ম্যাসেজ তো নেই। পরে কয়েকদিন স্কুল আর এজেন্টের কাছে ঘুরে ঘুরে শুধু হয়রানী হয়েছি। শেষে একজন এজেন্ট বলে ভাই হেল্পলাইনে কল করলে সমাধান আসতে পারে। বহুবার চেষ্টার পর হেল্পলাইন থেকে নগদের পিন রিসেট করে দেয়, তারপর জানতে পারি আমার ফোন থেকে ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। আবাক কান্ড আমি জানলাম-ই না, আর ক্যাশ আউট হয়ে গেলো? কার কাছে এর প্রতিকার পাবো? আর আমাদের টাকার কি হবে?

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, উপবৃত্তির এই টাকা প্রাপ্তির বিষয়টি নগদ-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আমরা এই বিষয়ে কিছুই জানি না। এমন কি নগদ-এর কোন ব্যক্তিরা এই উপজেলায় জড়িত আছেন কিনা তাও আমার জানার বাহিরে। তবে যারা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির জন্য নগদের এ্যাকাউন্ট খুলেছে সেই সব কিছু অসৎ দোকানীরা কিংবা এজেন্টরা নতুন এ্যাকাউন্ট খোলার পর সেই গোপন পিন নম্বরটি চুরি করে এবং পরে টাকা আসার সঙ্গে সঙ্গেই তারা কারসাজি করে সেই টাকা গ্রাহক জানার আগেই ক্যাশ আউট করে বের করে নিতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। সারা দেশে একদল সিন্ডিকেট পরিকল্পিত ভাবে হয়তো এমন অবৈধ কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে কিংবা উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির পদ্ধতিটি পরিবর্তন না করলে প্রতিবারই হাজার হাজার শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে প্রতিটি স্কুলের অভিভাবকদের আরো সচেতন করতে হবে। এছাড়া আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে উপর মহলকে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাবো।

উধাও হওয়া টাকাগুলো উদ্ধার করে শিক্ষার্থীদের হাতে পুনরায় সহজ পদ্ধতিতে সুষ্ঠ ভাবে ফেরত দেবার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন উপজেলার শত শত ভুক্তভোগী অভিভাবকরা।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


এ বিষয়ে আরো সংবাদ

Categories

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: