চুয়াডাঙ্গায় আমের বাম্পার ফলন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩

জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের তৈরি করা ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, ১৪ মে থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। প্রথম পর্যায়ে আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম বেচাকেনা চলছে। তবে দাম নিয়ে হতাশা আছে বাগানমালিকদের মধ্যে।

তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের ফলন ভালো হলেও কাংক্ষিত দাম মিলছে না। কৃষিবিভাগ ও আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন লিচু চলে আসায় আমের চাহিদা কিছুটা কম। কয়েক দিনের মধ্যে উন্নত জাতের আম বাজারে এলে আবার চাহিদা বেড়ে যাবে।

চুয়াডাঙ্গার আমের সবচেয়ে বড় মোকাম মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বড়বাজার ফলপট্টি। সেখানে ১৪টি পাইকারি আড়ত আছে। পাইকারি আড়তগুলোর মালিকেরা বলেন, গত মঙ্গলবার এই মোকামে সারা দিনে অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম বিক্রি হয়েছে। গত বুধবারও ভোর পাঁচটা থেকে এই মোকামে আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আজও একই ভাবে আম বেচা কেনা হচ্ছে।  বাজারে তিন ধরনের আম এলেও বোম্বাই আম ছাড়া অন্য দুই জাতের আমের তেমন চাহিদা নেই।

বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুমিষ্ট জাত হিসেবে মৌসুমের শুরুতে বোম্বাই আম প্রথম পাকে। আজ সকালে বোম্বাই আম আকার ও মানভেদে প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আঁটি ও গুটি আম প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছর মৌসুমের শুরুতেই প্রতি মণ বোম্বাই আম ১ হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে আঁটি ও গুটি আমের দাম ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।

এদিকে, পাইকারি বাজারের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গার খুচরা বাজারেও আমের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে নদীর ঘাট বাজার ও শহীদ হাসান চত্বরের খুচরা দোকানগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বোম্বাই আম মানভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং আঁটি ও গুটি আম ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শহীদ হাসান চত্বরের ফল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ বছর আমের দাম সবচেয়ে কম। তারপরও ক্রেতা মিলছে না। বাজারে বর্তমানে লিচু চলে আসায় ক্রেতাদের ঝোঁক সেদিকে। লিচু শেষ হলে আমের বাজারের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন বেচাকেনা ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি।

আমবাগানের মালিক চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার আব্দুল কুদ্দুস মহলদার বলেন, প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৪ মে থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখার আশঙ্কায় বাগানমালিকদের অনেকেই প্রথম দিনেই গাছ থেকে পরিপক্ব আমের পাশাপাশি অপরিপক্ব আম পেড়ে বাজারে তুলেছেন। অপরিপক্ব আমের কারণে এসব আমের ক্রেতা কম। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে আমের সরবরাহ বেশি। চাহিদার তুলনায় বাজারে বেশি আম ওঠার কারণে কাঙ্ক্ষিত দামও মিলছে না বলে মনে করেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ফল ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, এ বছর ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার মেনে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। অপরিপক্ব আম বাজারজাত করলে সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। আবার ভালো দামও পাওয়া যায় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় ২৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক সময়ে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করতে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করেছে। সে অনুযায়ী ২২ মে হিমসাগর, ২৫ মে ল্যাংড়া, ৫ জুন আম্রপালি ও বারি-৩, ২১ জুন ফজলি ও ১ জুলাই আশ্বিনা ও বারি-৪ আম সংগ্রহ এবং বাজারজাত করা যাবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমানে বাজারে লিচু ও উন্নতমানের কলার ছড়াছড়ি। সে জন্য আমের দাম কিছুটা কম আছে। তবে হিমসাগর ও ল্যাংড়া সংগ্রহ শুরু হলে আমের বাজার চাঙা হবে। আমচাষিও বাগানমালিকেরা ভালো দাম পাবে।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


এ বিষয়ে আরো সংবাদ

Categories

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: