২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ || শনিবার || ০৩:৫০ অপরাহ্ন
কামরুজ্জামান সিদ্দিকী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রথমে টাকা হাতিয়ে ও পরে বিয়ের ফাঁদে ফেলে বিয়ের পূর্বেই বিভিন্ন অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিলো তার পেশা। সর্বশেষ বিয়ে করতে এসে জানাজানি হয়ে যায় বিষয়টি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ের বাবা সেই প্রতারক যুবককে বেঁধে রেখে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন। এসময় তাকে তার আসল মা দেখতে আসলে তাকেও আটক করে মেয়ের পরিবার।
ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের মহিষমারী গ্রামে। প্রতারক ছেলেটিকে আটক করা হয় জেলার রানীশংকৈল উপজেলা থেকে। পরে তাকে সেখান থেকে ওই গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
তার আসল নাম মো. আখিরুল ইসলাম। বয়স ৩৫ বছরের কাছাকাছি। পিতা মৃত- আবিদ হাসান। ঠাকুরগাও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার জসিয়া (রাজবাড়ী) এলাকায় তার বাড়ী। বর্তমানে তার অবিভাবক মা আরিফা বেগম।
সে প্রতারণার সময় আখিরুল ওরফে আফিরুল ওরফে বাপ্পি নাম ধারণ করে। কখনো গানের স্কুলের মাস্টার, কখনো বিএসসি শিক্ষক, কখনো কোচিং সেন্টারের শিক্ষক আবার কখনো কোরআনের হাফেজ সেজে প্রতারণা করে আসছিলো।
প্রতারণায় ফেঁসে যাওয়া মেয়ের পরিবারের মাধ্যমে জানা গেছে, ৩/৪ মাস পূর্বে স্থানীয় ঘটক শামশুল আলম ও নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় এই ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ছেলে তার মামাত ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আসেন। মেয়ে দেখতে এসে সে নিজেকে বিএসসি শিক্ষক পরিচয় দেয় এবং পরে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। যেহেতু ছেলে বিএসসি শিক্ষক তাই মেয়ের পরিবারও প্রস্তাবটি লুফে নেয়। চলে টাকা লেনদেনসহ বাড়ী ওঠা বসা। কনের ছোট বোনকে একদিন বেড়াতেও নিয়ে যায়। দেখানো হয় ছেলের ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ী। তার মা সাজানো হয় ওই বাড়ীর এক মহিলাকে। যথারীতি আদর আপ্যায়ন এবং স্নেহও করে কনের ছোট বোনকে। বলে মা হজ করে এসেছেন।তিনি সরকারী চাকরি করতেন।এখন অবসরে আছেন।এসব মুখরোচক গল্প বানিয়ে মেয়ে ও মেয়ের পরিবারকে আয়ত্বে নেন তিনি।
শুরু হয় বিয়ের আলোচনা। চুড়ান্ত হয় বিয়ের যৌতুক ৮লক্ষ টাকা। দফায় দফায় নগদ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ দুই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয় সে। বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয় ঈদের পঞ্চম দিন কিন্তু এর মধ্যে ছেলে আর ফোন রিসিভ না করায় কনের বাবার মনে সন্দেহ দেখা দেয়। ছেলের খবর নিতে রানীশংকৈল রাজবাড়ী এলাকায় গেলে ওই নামে কোন লোককে আর পায়নি এবং একে একে অসংখ্য প্রতারণার খবর বের হয়।
তারপরে মেয়ের পরিবার বুঝতে পারে তার দেওয়া নাম ও পেশা ভুয়া। তার দেওয়া বাপ্পি নামটি এলাকায় কেউ চেনে না। তার নাম আখিরুল ওরফে আফিরুল। সে কোন বিএসসি শিক্ষকও নয়, হাফেজও নয় কিংবা নয় কোন গানের স্কুলের মাস্টার। তার দেয়া সকল পরিচয় ভুয়া। সে একজন প্রতারক। সে পলাতক ছিল। অনেক কৌশল করে তাকে আটক করা সম্ভব হয়। এসব কথা বলছিলেন মেয়ের বাবা। প্রতারক ছেলেটিকে আটক করে রাখায় ছেলের আসল মা আরিফা বেগম বালিয়াডাঙ্গীর মহিষমারী গ্রামে আসলে তাকেও আটক করা হয়।
দুওসুও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, ঘটনাটি আমার গ্রামের। মেয়ে ও মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে প্রতারক ছেলেটি যে টাকা নিয়েছে তা ফেরত দিলে ছেলেটি ও তার মাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
প্রতারণায় ফেঁসে যাওয়া মেয়ে (কনে) বলেন, সে আমাকে তার মামাত ভাইয়ের জন্য দেখতে এসেছিল। তার মামাত ভাই এসএসসি পাশ। আমি বিএসএস এ পড়ি। সে নাকি বিএসসি শিক্ষক সে আমাকে বিয়ে করবে মর্মে প্রস্তাব দেয়। আমি তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাই কিন্তু পরে জানতে পারি সে প্রতারক। তাকে আটকের পর আমাদের বাড়ীতে ৩/৪ জন লোক তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। তাদের কাছে শুনেছি সে আরো ৫/৬ টি বিয়ে করেছে। তবে ওই এলাকার শ্রমিকনেতা আনোয়ার জানান, তার ২০/২১ টির মতো এরকম প্রতারণার ঘটনা রয়েছে।
মেয়ের বাবা আবেদুর জানান, সে তার মায়ের অপারেশনের কথা বলে টাকা নিয়েছে। তার চাকরির কথা বলে টাকা নিয়েছে। আসলে সবই ভুয়া। ওই প্রতারকের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দেব না। আমার দেওয়া টাকাগুলো পেলেই তাকে ছেড়ে দেব।
আখিরুল ওরফে আফিরুল জানান, টাকা নিয়েছি সত্যি। যদি তারা চায় তাহলে আমার বিয়ে করতে কোন আপত্তি নাই। না হলে কষ্ট করে হলেও তাদের টাকা আমি ফেরত দিয়ে দেব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতোগুলো নয় আগে মাত্র একটি বিয়ে করেছি। আর একটি বিয়ে দিতে চেয়েছিলো সেজন্যই আমি পালিয়ে চলে আসি।
তবে জানা যায় তিনি আরও অনেক মেয়েকে বিবাহের নামে স্বর্ন ও নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।