রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুর এ.কে. ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম কবির আখতার জাহান মাউশির নির্দেশনা থাকা শর্তেও এমপিও ভুক্ত হতে না পরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ওই প্রধান শিক্ষক ২০১৯ সালের মে মাসে সরকারী বিধিমোতাবেক প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেলেও বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মোঃ আবুবকর সিদ্দীক এর ব্যক্তি স্বার্থ এবং আক্রোশের জেরে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করায় প্রধান শিক্ষক পদে এমপি ভূক্তির ফাইলটি আটকে আছে। গত বছর ধর্মীয় শিক্ষক আবুবকর সিদ্দীক ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন কিন্তু তার বিএড সনদপত্র না থাকায় আবেদনপত্রটি বিধিমোতাবেক বাতিল হয়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবু বক্কর সিদ্দীক ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার , আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসসহ উর্ধ্বতন মহলে বিধি বহির্ভূত ভাবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। সেই সময় প্রধান শিক্ষক এর পূর্বের নিয়োগ সম্পর্কে আঞ্চলিক উপ-পরিচালক গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেন।
এ বছর ৭ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকার চন্দ্র শেখর হালদার ( ২৩৬৫০) শিক্ষা কর্মকর্তা ( মাধ্যমিক – ১) স্মারক পত্র নং – ৪ জি- ১৬৪৭- ম/২০০৮/১১৬৫ তারিখ: ০৭/১০/২০২০ খ্রি: আঞ্চলিক উপপরিচালক রাজশাহীকে গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুর এ. কে ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গোলাম কবির আখতার জাহান (ইনডেক্সি নং- ৫৫৯১৫৫) এর এম.পি.ও ভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা কামনা করে তথ্যাদিসহ আবেদন দাখিল করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের দায়েরকৃত রিটি পিটিশন নং -৬৫৩৯/২০১৭ দায়ের করলে উক্ত মামলায় ০৯/০৫/২০১৭ খ্রি: তারিখের আদেশে কারণ দর্শানোর রুল হয়। পরবর্তীতে আর কোন আদেশ নথিতে নেই এবং মামলাটি শুনানীতেও আসেনি। এক্ষেত্রে তদন্ত রিপোর্টের আলোকে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। ওই প্রধান শিক্ষকের এম.পি.ও ভুক্তির বিষয়টি বিধিমোতাবেক অনলাইনে নিস্পত্তি করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এ পত্রটির কপি জেলা শিক্ষা অফিসার, শিক্ষা কর্মকর্তা ( আইন) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ ৭ জনকে কপি দেয়া হয়েছে।
গত বছর ০৩/১০/২০১৯ ইং তারিখে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ দুলাল আলম তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন গোলাম কবির আক্তার জাহান ২০০১ খ্রি. সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পান, পরে ২০২০ খ্রি. সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান, কিন্তু ওই সময় কাম্য অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে তিনি সহকারী শিক্ষকের বেতন ভাতা গ্রহন করেন। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ০৪/১০/২০১০ খ্রি. তারিখের ন নম্বর শিম/শাঃ ১৩/ ত্রামপিও-১২/২০০৯/৭৫ প্রজ্ঞাপনের ১১ ( খ ) ধারার কাম্য অভিজ্ঞতা না থাকায় নিন্মের বেতন স্কেলে অর্থাৎ ১১০০০ টাকার স্কেলে বেতন ভুক্ত হন। পরে অভিজ্ঞতা পূর্ন হওয়ার পর তিনি বেতন কোড ৮ অর্থাৎ ১২০০০/- হাজার টাকা স্কেলে এমটিও ভুক্ত হন। তিনি বিধি বর্হিভূতভাবে বা জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরিক্ত কোন বেতন ভাতা গ্রহন করেন নি বলে উল্লেখ করেছেন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।
গত বছর তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এবং মহামান্য হাইকোর্টের রীটের বিষয়ে রাজশাহীর আঞ্চলিক উপ-পরিচালক প্রধান শিক্ষকের এমপিও ভূক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা চেয়ে মাউশিতে আবেদন পাঠান। এ সম্পর্কিত নির্দেশনা গত ০৭/১০/২০ ইং তারিখের স্বাক্ষরে উপ-পরিচালক রাজশাহী অঞ্চলে এসে পৌছায়। এতে প্রধান শিক্ষক গোলাম কবির আখতার জাহান এর এমপিও ভূক্তির জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন এবং মাউশির আইন শাখার মতামত অনুযায়ী বিধি মোতাবেক অনালাইনে বিষয়টি নিষ্পত্তির কথা সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি এমপিও হতে না পেরে স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবণ যাপন করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড.শরমিন ফেরদৌস চৌধুরীর মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি বলেন, মাউশির নির্দেশনা ও গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদনের কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি যখন নিয়োগ পান তখন কাক্ষিত যোগ্যতা ছিল না তাই প্রধান শিক্ষকের ফাইল আঁটকিয়ে আছে। ওই যোগ্যতা না থাকার কারণে তিনি বিধিমোতাবেক নীচের স্কেলে বেতন ভাতা ভোগ করেছেন, এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেটা তার তদন্ত প্রতিবেদনে সেটা উল্লেখ করেন নি তাই জেলা শিক্ষা অফিসারকে পুন:রায় তদন্ত করতে দোয়া হয়েছে।
এ ব্যপারে রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাঃ নাসির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোলাম কবির আখতার জাহান সরকারী বিধিমোতাবেক গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুর একে ফজলুলহক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে এমপিও ভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন, আমি মাউশির নির্দেশনা ও সরকারী বিধিতোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনে সুপারিশ করেছি। জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী শিক্ষকদের সাথে অফিসিয়্যাল তথ্য আদান প্রদানের জন্য অনেক সময় আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় হয়, প্রধান শিক্ষক আমাদের অফিসে আসেন তথ্যাদি আদান প্রদান করেন ফলে শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়ন হয়।
প্রধান শিক্ষক গোলাম কবির আখতার জাহান এ প্রতিবেদককে জানান, ধর্মীয় শিক্ষক আবুবকর সিদ্দীক এক শ্রেণির হলুদ সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে একের পরে এক ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেন এবং উপ-পরিচালক, রাজশাহীতে অভিযোগ করেন। ওই ধর্মীয় শিক্ষকের মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ করায় ঐতিহ্যবাহী কাশিমপুর এ.কে.ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সুনাম ক্ষুন্ন করারই অপচেষ্টা মাত্র। তকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কয়েকবার তিরস্কার করা হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষকের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ, সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকবৃন্দ সকলেই খুবই উদ্বিগ্ন।
অভিযোগকারী ধর্মীয় শিক্ষক আবুবকর সিদ্দীকের ০১৭১০৬২৯১৭৬ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি।
ভুক্তভোগি প্রধান শিক্ষকের পরিবার, এলাকার শিক্ষিত সমাজ, সচেতন মহল, শিক্ষার্থী, অভিভাবকবৃন্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যাবলী সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার স্বার্থে, মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রধান শিক্ষক গোলাম কবির আখতার জাহান এর এমপিও ভূক্তির জন্য প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।