শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। মা বাবার পর শিক্ষকদের স্থান, আর সে শিক্ষক যদি চাকুরী করার জন্য জাল সনদ ক্রয় করে ধরা পড়েন তবে কেমন হয়। শিক্ষক নামের কলঙ্ক।
কথায় বলে বাঘে ধরলে ছাড় পাওয়া যায় কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার ধরলে আর ছাড় পাওয়া যায় না। এটা আবার প্রমানিত হলো।
জাল সনদে ১৬ বছর চাকুরী করে চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হলেন সহকারী শিক্ষক মোসাঃ মাকসুদা খাতুন। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার চব্বিশনগর নগর স্কুল এন্ড কলেজে। বিষয়টি এখন গোদাগাড়ীর টক অফ দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছেন।
জানা গেছে, জেনে শুনে জালসনদ নিয়ে সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার পদে নিয়োগ পত্র গ্রহন করেন। বিধিমোতাবেক মোতাবেক তিনি এমপিও ভুক্ত হন।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এম.পি.ও কোড ৮৬০৬০৫১৩০২, আইএন নাম্বার ১২৬৭৬৮, সহকারী শিক্ষিকার ইনডেক্স নম্বর আর ১০২৪১৩২, বেতন কোড ০৯, গোদাগাড়ী সোনালী ব্যাংক গোদাগাড়ী শাখার হিসেব নম্বর ৭০৩৬/৩৮ বর্তমানে তিনি বেতন পান ২৬৯৮০/- কর্তন করার পরে পান ২৪৪৩২/- টাকা। জাল সনদে ১৬ বছর চাকুরী করার পর বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় জন রেসের সৃষ্টি হয়। জাল সনদপত্রে চাকুরী করা শিক্ষিকার নিকট থেকে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে? এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর অনেকের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২ দফা অডিটে জাল সনদের বিষয়টি ধরা পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক মোসাঃ জিন্নাতুন নেসার সথে সুস্পর্ক থাকায় ব্যাংক কর্মচারী তৌফিকের যোগসাজসে তিনি সোনালী ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা লোন নিয়ে জিন্নাতুন নেসাকে দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপ দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। চলতি বছরের গত ৩০ নভেম্বর তিনি বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন। উল্লেখ্য স্থানীয় মোঃ মাহাবুব, সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মাকসুদা খাতুনের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকুরীর করার বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। এর পর এলাকায় ফের জনরেসের সৃষ্ট শুরু হয়। এর পর অবস্থা বেগতিক দেখে জাল সনদে চাকুরী করা অবস্থায় ১৬ বছরের বেতন ভাতা ফেরত দোয়া ও বিভাগীয় মামলা থেকে রেহায় পেতে সহকারী প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন নেসার পরামার্শে চাকুরী থেকে ইস্তেফা দেন। জাল সনদে চাকুরী করা সহকারী শিক্ষক মাকসুদা খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মোঃ মাহবুব বলেন, ওই শিক্ষিকার কম্পিউটার সনদ জাল প্রমানিত হওয়ায় গর্ভনিং বড়ি পরামার্শে আমি লিখিত অভিযোগ করি। বিষয়টির জন্য উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষের নিকট অভিযোগ ও মামলা করার প্রস্ততি নেয়ার সময় ওই শিক্ষিকা চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন। তাই আর অভিযোগ ও মামলা করা হতে বিরত থাকি।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে চাকুরীতে ইস্তেফা দিলেও ব্যাংক কর্মচারী তৌফিক ও জিন্নাতুন নেসার সহযোগিতায় পদত্যাগ দেয়া শিক্ষিকা ব্যাংক থেকে বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানেই শেষ নয় সহকারী প্রধান শিক্ষিকা জিন্নাতুন নেসার সাথে সোনালী ব্যাংক কর্মচারী তৌফিকের সাথে সুম্পর্ক থাকায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির গোদাগাড়ী শাখার সভাপতির সভাপতি চয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমএন রেদওয়ান ফেরদৌসের নিকট জালবাজ শিক্ষিকার নামে চেক না নিয়ে জিন্নাতুন নেসা নিজ নামে সমিতির অবসর সুবিধার ১ লাখ টাকার চেক নেয়ার জন্য জোর তদবির করেছেন। জিন্নাতুন নেসা সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পরেও তিনি সমিতির বিধি ভঙ্গ করে জালবাজ শিক্ষিকার অবসর সুবিধার ১ লাখ টাকার চেক নিজ নামে নেয়ার জোর চেষ্টা এখনও অব্যাহত রেখেছেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি এমএন রেদওয়ান ফেরদৌস বলেন, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোসাঃ জিন্নাতুন নেসা আমাকে বলেন, আমার স্কুলের মাকসুদা খাতুন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, তার অবসরের সমিতির ১ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের চেকটি আমার নামে দিতে হবে। আমি আপনার নিকট আসচ্ছি। এ সময় জিন্নাতুন নেসা সুস্পর্কের সোনালী ব্যাংক কর্মচারী তৌফিককে গোদাগাড়ীর একটি হোটেলে সভাপতির সাথে বসেন এবং চেকটি পাওয়ার জন্য জোর তদবির করেন।সভাপতির বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে চেকটি আটকিয়ে দেন। এসময় ব্যাংক কর্মচারী তৌফিক বলেন, আমি ব্যাংক ম্যানেজাের মাধ্যমে চেক দেয়ার জন্য চিঠি করে দিব। কিন্তু সভাপতি তদন্ত না করে চেক স্বাক্ষর করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এতে করে চেকটি আঁটকিয়ে আছে। সভাপতি আরও জানান, কোন শিক্ষক কর্মচারী চাকুরীরত অবস্থায় অবসর গ্রহন করলে অথবা মৃত্যু বরণ করলে সমিতির অবসর সুবিধার সুযোগ রেয়েছে। কিন্তু স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করলে সনদপত্র জালিয়াতির অন্য কোন কারণে চাকুরীচ্যুত হলে এ সুবিধা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
গোগ্রাম আর্দশ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির নেতা মোঃ শহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর জিন্নাতুন নেসা আমাকে একাধিক বার মোবাইল করে ওই শিক্ষিকার চেক তার নামে নেয়ার জন্য তদবির করেছেন। এর পর সোনালী ব্যাংক কর্মচারী তৌফিক মোবাইল করে জিন্নাতুন নেসার পক্ষে জোর তদবির করেন। গোগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন করে বলেন, আমি জানি মাকসুদা খাতুন জাল সনদে চাকুরী করছিল, মানবিক কারণে তাকে চেক দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অবসরের টাকার চেক দেয়ার কোন বিধান নেই মিটিং এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ওই জাল সনদে চাকুরী করা শিক্ষিকার নিয়োগের তদবির কারক তাকে চাকুরে ১৬ বছর টিকিয়ে রাখার হোতা, সহকারী প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন নেসার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি দায়সারা গোছের বক্তব্য দেন এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের মোবাইল নম্বর দিয়ে উনার সাথে কথা বলতে বলেন।
অধ্যক্ষ আহসান হাবীব বলেন, সহকারী শিক্ষিকা মাকসুদা খাতুন জাল সনদপত্রে বছরের পর বছর চাকুরী করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই ম্যাডামের সনদপত্র জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় গর্ভনিং বডির সভায় বিষয়টি আলোচনা হয় এবং তাকে চাকুরীতে ইস্তেফা দেয়ার কথা বলা হলে তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি আরও বলেন, ওই শিক্ষিকা জাল সনদে এতদিন চাকুরী করায় তাকে অবসর ও কল্যাণের আবেদন করা সুযোগ দেয়া হবে না।