“সিনিয়র প্রভাষক নতুন কোন পদ নয়” শিক্ষকদের ঠকানোর মানসিকতা সূ-নীতি নয়”
উচ্চ মাধ্যমিকে সহকারী অধ্যাপক বিলুপ্তি করণ শিক্ষা ও প্রভাষকদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।১৯৯৫/২০১০ সালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৭ম গ্রেডের প্রভাষকগণ কে সিনিয়র প্রভাষক বলা হয় ।তাহলে নীতিমালা সংশোধন কমিটি “সিনিয়র প্রভাষক” পদ সৃষ্টি নতুন করে কোথায় থেকে আবিস্কার করলেন!?
নীতিমালা সংশোধন কমিটি কি আগের নীতিমালা না পড়ে সংশোধনে হাত দিয়েছেন? না কি ইচ্ছে করে উচ্চ শিক্ষা ধ্বংশ ও প্রভাষকদের আর্থিক ক্ষতি সাধন করার জন্য আজগুবি বিধান প্রবর্তন করতে যাচ্ছেন! আগের নীতিমালা ভালোভাবে পড়লে “সিনিয়র প্রভাষক” পদ নতুন সৃজন বলে মনে হওয়ার কথা নয়। আগের নীতিমালা অনুযায়ী ৭ম গ্রেডের প্রভাষক কে “সিনিয়র প্রভাষক”বলা হয়।
সত্যি যদি সংশোধন কমিটি এ রকম সুপারিশ করে থাকে তাহলে সেই সুপারিশ ‘অভিশপ্ত’ “কালো আইন” অনুপাত প্রথার চেয়ে বৈষম্য আরো প্রকটভাবে সৃষ্টি করবে। প্রভাষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আগের চেয়ে বেশি।
ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক “সহকারী অধ্যাপক” পদে পদোন্নতি পাবে আর উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে “সিনিয়র প্রভাষক” পদে পদোন্নতি আটকে যাবে। তাহলে নতূন বিধান অনুপাত প্রথার চেয়ে কোন অংশে ভালো সংশোধনী কমিটি একটু বলতে পারবেন কি ?
৫:২ অনুপাত প্রথার কারণে নির্দিষ্ট কিছু প্রভাষক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে “সহকারী অধ্যাপক” হওয়ার সুযোগ পেত। অধিকাংশ প্রভাষক কে পদোন্নতি ছাড়া একই পদে সারা জীবন চাকরি করতে হতো। তাই প্রভাষকগণ দীর্ঘ দিন থেকে এই অভিশপ্ত অনুপাত প্রথা বিলুপ্ত করে সবাইকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি করে আসছে।
২০১৩ সালের সংশোধিত জনবল কাঠামো তে ডিগ্রী স্তরের কলেজ ও ফাজিল মাদ্রাসায় “সহযোগী অধ্যাপক” পদ সৃজনের সুপারিশ ছিল। প্রভাবশালী কূ-চক্রীমহলের কালো থাবায় কিছু দিন পর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অদ্যাবধি সেই স্থগিতাদেশ রহিত করে সহযোগী অধ্যাপক পদ সৃজনের কার্যক্রম শুরু করা হয় নি।
বরং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদ বিলুপ্ত করে কেবল ডিগ্রী স্তরের কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে ৫০% পদোন্নতির চিন্তাধারা সেই চক্রান্তের প্রতিধ্বনি মাত্র। এ ধরনের নীতিমালা করা হলে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী স্তরের প্রভাষকদের মধ্যে নতুন করে আরেক বৈষম্যের পালক সৃষ্টি হয়। যা পূর্বের কোন জনবল কাঠামো তে ছিল না। শিক্ষক সমাজ এ অন্যায় ও বৈষম্য কিছুতেই মেনে নেবেনা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি কূ-চক্রীমহল এমপিওভুক্ত কলেজ ও মাদ্রাসার প্রভাষকদের সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। তাদের কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক গণ নানাভাবে হয়রানি ও পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন।
যতবার নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে ততবারই এমপিওভুক্ত প্রভাষক ও শিক্ষকদের টেনে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! যেন শিক্ষকতা পেশায় এসে তারা বড় ভুল করে ফেলেছে! বৈষম্য ও বঞ্চনা কে কাস্টম ও রাষ্ট্রীয় রূপ দেওয়া হচ্ছে!
এমনকি জাতীয় শিক্ষানীতি কে অবজ্ঞা এবং শিক্ষা নীতির সূপারিশ কে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হচ্ছে! ২০১০ সালের প্রণীত শিক্ষা নীতি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করার সূস্পষ্ঠ সুপারিশ করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সূযোগ-সূবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর প্রতিটি নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও প্রভাষকদের ইচ্ছে করে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধাক্কা দিয়ে পিছনে ফেলে দেওয়ার অপচেষ্টায় ব্যস্ত!যা মানসম্মত শিক্ষার একেবারে পরিপন্থী, বেআইনি এবং অসাংবিধানিক ও বটে।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কে উন্নত,গুণগত ও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেও নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আচরণে তার প্রতিফলন ঘটে না। মনে হয় শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থায় হতাশা, অস্থিরতা, বৈষম্য,শোষন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করার মানসিকতা নিয়ে নীতিমালা তৈরি জন্য উঠেপড়ে লেগে থাকেন! তা না হলে দেশের অধিকাংশ শিক্ষক যা প্রত্যাশা প্রত্যাশা করেন কিংবা উন্নত ও গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা বিনির্মাণে যে সমস্ত উপকরণের উপস্থিতি আবশ্যক তার প্রতিফলন নীতিমালায় হয় না।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির নেতৃত্বাধীন বর্তমান নীতিমালা সংশোধন কমিটির কাছে পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকদের প্রবল আস্থা রয়েছে যে,অনুপাত প্রথার মত এই ভয়ঙ্কর কালো আইন থেকে তারা মুক্তি পাবে। কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে প্রকাশিত হল যে, ইন্টারমিডিয়েট কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদ বিলুপ্তি করে “সিনিয়র প্রভাষক” পদ সৃজনের সুপারিশ করতে যাচ্ছে নীতিমালা সংশোধন কমিটি। যা একেবারে অবিবেচনাপ্রসূত ও আগের অনুপাত প্রথার চেয়ে মারাত্মক শিক্ষক স্বার্থ বিরোধী।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে এটুকু আস্থা রাখতে চাই যে, তিনি কূ-চক্রীমহলের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করবেন। অনুপাত প্রথা বিলুপ্ত করে সহকারী, সহযোগী ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করে ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। আজগুবি শিক্ষা বিধ্বংসী যত “কালো আইন” থেকে শিক্ষক সমাজ কে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।
লেখক: আবদুল মান্নান, শিক্ষাবিদ ও কবি
____________________________________