”ওসি প্রদীপের নির্দেশে মেজর সিনহাকে গুলি হত্যা করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত”

আবদুল মান্নান
বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০২০, ৬:৩৮ অপরাহ্ন
”ওসি প্রদীপের নির্দেশে মেজর সিনহাকে গুলি হত্যা করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত”

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করেছেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

ঘটনার ১৫ মিনিট পর ওসি প্রদীপ কুমার দাস ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই তখনও জীবিত থাকা মেজর সিনহাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার শরীরে লাথি মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে একটি ‘ছারপোকা গাড়ি’তে তুলে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।

বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমন অভিযোগ আনেন বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। তিনি ভিকটিমের বড়বোন। আর্জি শুনানীকালে তিনি হতবিহ্বল, শোকাহত অবস্থায় ছিলেন।

গত ৩১ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছরা পুলিশ চেকপোস্টে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।

ওই মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নাম্বার আসামি করা হয়েছে।

অন্যান্য আসামীরা হলেন- বাহারছরা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।

তবে মামলায় পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি করা হয়নি।

টেকনাফ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক তামান্না ফারাহ মামলাটি ‘ট্রিট ফর এফায়ার’ হিসেবে আমলে নিয়ে ৩টি আদেশ প্রদান করেন।প্রথম আদেশে আদালত মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে পুলিশ কে নির্দেশ দেন।

দ্বিতীয় আদেশে মামলাটি রেকর্ডের পর এলিট ফোর্স র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মামলাটি তদন্ত করতে আদেশ দেন।তৃতীয় আদেশে বলা হয়, আগামি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার অগ্রগতি আদালতকে অবহিত করতে হবে।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ‘৩১জুলাই রাতে একটি ইফটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে রাত আনুমানিক সাড়ে টার দিকে মেজর (অব:) সিনহা মো: রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌছলে ১নং আসামী লিয়াকত ও ৩নং আসামী এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ি গতিরোধ করে মেজর সিনহার পরিচয় নেন। এরপরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামরাম্যান সিফাতকে টানা হেচড়া করে গাড়ী থেকে নামিয়ে ফেলে। এসময় সিফাত দুই হাত উচু করে গাড়ী বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেয়। পরিচয় দেয়ার পরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ‘তোর মত অনেক মেজর দেখেছি’ বলে সিনহাকেও গাড়ী থেকে নামিয়ে ফেলে। মুহুর্তে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যায়। এসময় মেজর সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেয়।

মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ১নং আসামী এসআই লিয়াকত আরও এক রাউন্ড গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার জন্য ইয়াবা, গাজা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

আদালত থেকে বেরিয়ে মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার সাদের নির্দেশনা মতে এসআই লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় পা দিয়ে লাথি মেরে মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করে। এসময় অন্যান্য আসামীরা তাদের সহযোগিতা করে। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’

আমি চাই, ‘আমার ভাই রাশেদের হত্যাকারিরা আইনের আওতায় আসুক। দোষিদের শাস্তি কামনা করছি।’

মামলার প্রধান কৌশলী সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, মামলার শুনানি শেষে সন্তুষ্ট হয়ে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন বিচারক তামান্না ফারাহ।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com