রানীশংকৈলে গুনী শিল্পী মোজাম্মেলের বিদায়

নাজমুল হোসেন, রানীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও
বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১, ৬:৫৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিশিষ্ট সংগীত
শিল্পী ঠাকুরগাঁও বেতার কেন্দ্রের সংগীত প্রযোজক রানীশংকৈল সংগীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবলু (৭০) বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ৩টায় দিনাজপুর  এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তিনি মৃত্যুকালে এক স্ত্রী ভাই বোন অনেক গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তৃতীয়।তিনি পশ্চিমবাংলার রায়গঞ্জে শংকরপুর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে চোখের সমস্যার কারনে আর লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারেননি কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি সঙ্গীত চর্চা থেকে।

তিনি অনেক সংগীত শিল্পী তৈরি করেছেন নিজ হাতে।তিনার অনেক ছাত্র ছাত্রী গান বাজনা শিখে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গান চর্চা করে আসছেন।  এই গুণী শিল্পীর জীবনে অবসানে সমগ্র ঠাকুরগাঁও জেলার সঙ্গীত প্রেমীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গুণী শিল্পী বাবলু ১৯৬৮  খ্রিস্টাব্দে বাল্যকালেই পেয়ে যান তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান রংপুরে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে নজরুল গীতি পরিবেশনের সুযোগ।

স্বাধীনতার পরবর্তী কালে ১৯৭৩থেকে১৯৭৪ সালে তিনি পীরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বপাশে থাকতেন এবং পীরগঞ্জের ছেলে মেয়েদের গান শেখাতেন। তিনি১৯৭৫-১৯৭৬ সাল থেকে তিনি দিনাজপুর থেকে সঙ্গীত চর্চা করতেন আশির দশকে তিনি ফিরে আসেন রানীশংকৈলে।গুনী শিল্পীর ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।মোজাম্মেল হক বাবলুর সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালের তেসরা মার্চ প্রতিষ্ঠাত হয় রানীশংকৈল  সংগীত বিদ্যালয়। তিনি ছিলেন সংগীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরবর্তীতে নব্বই দশকের শেষ ভাগে ঠাকুরগাঁও বেতার কেন্দ্র স্থাপিত হলে তিনি সেখানে সংগীত প্রযোজক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে থাকাকালীন সময়ে সুর সপ্তক নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সুর সপ্তক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতিও ছিলেন। এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ঠাকুরগাঁও ৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ইয়াসিন আলী, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহি অফিসার সুলতান জুলকার নাইন কবির সহ রানীশনকৈল প্রেসক্লাব, ঠাকুরগাঁও বেতার, ঠাকুরগাঁও জেলার সমগ্র শিল্পী কলাকুশলী ও শ্রোতাগণ।

পরে রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজ মাঠে বিকাল সাড়ে ৪ টায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।পরে পাঁচ পীর  কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এসময় অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহীর চোখের জলে সিক্ত হয়েছেন এই গুনী শিল্পী।

এই গুণী শিল্পীর পরিবারের হাতে জেলা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি নগদ দশ হাজার  টাকা আর্থিক সহায়তা তুলে দেন।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com