এক যে ছিল রানী….

অন্যদৃষ্টি অনলাইন
শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ৮:২৭ অপরাহ্ন
উশু প্রতিযোগিতার সেরা ক্রীড়াবিদ রাজিয়া সুলতানা রানী....

।। এলিস হক ।।

২০১৮ সালের একটা ঘটনা। যখন দশমশ্রেণীতে পড়েন। তখন সেই সময়ে নিজেকে উপযোগী ক্রীড়াবিদ মেলে ধরার জন্য তাঁর সংগ্রাম শুরু।

একটা স্বপ্নই তাঁকে চালিত করে। সুপ্ত ইচ্ছাই তাঁর মহান সাধনে ব্রত। তাঁর ক্রীড়াঙ্গনের পদচারণাই জন্ম হয়েছিল কিনা তা ভবিতব্য বলবে…অথচ তাঁর বাবার অন্যরকম মনোবাসনা ছিল–তার পায়ের নিচে মাটি খুঁজে বের করা। অনেকদূর যাওয়া অসম্ভব কিছু না। সেভাবেও তাঁর শুরু হয়েছিল।

প্রথমে নিজের গ্রাম হতে খেলা শুরু করা। পরে আস্তে আস্তে তার বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়া।
-শহর হতেই সেখানে সাফল্য ধরিয়েই দিলো
-জেলায় সাফল্য
-বিভাগে সাফল্য
-সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য। তারপর?
এখন বাকি সর্বোচ্চ লেভেলের ভেন্যু–আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলা।
সাফল্য পাওয়া তো বিরাট সাধনার ব্যাপার। কিভাবে সম্ভব?এতো চিন্তাভাবনার ফসল কিন্তু একদিনেই হয় না?
গল্পের শুরু এখানে–খুব ছোট্টকিশোরী বয়স হতেই ঘুষোঘুষি করার দৃশ্য দেখলে মাথা বিগড়ে যায়। সেই যে শুরু হলো আর থামেনি। পাড়ার ছেলেদের মারমুখী কোনোকিছু দেখলেই তিনি উৎস্যুক হয়ে দেখেন।
রানীর মুখেই শুনুন তাঁর সাফ কথা-‘আমি ফুটবলকে খুব পছন্দ করতাম। ফুটবল খেলতে খেলতে জানতে পারি যে, মারদাঙ্গা মানে মারামারির একটা খেলা আছে। উশু বলতে কোনো ইভেন্ট আছে নাকি ভাই? আমি এই জন্মেও কোনোদিন শুনিনি। অজপাড়া গাঁয়ে এই জাতীয় উশু খেলার কোনো অস্তিত্ব নাই। উশু কিরে ভাই’?
জানা পরিবেশের মধ্যে গ্রাম্য হতে বড় হয়ে উঠেন। পরে তিনি জানতে পারেন-উশু খেলা বলে একটা কিছু আছে। কিন্তু উশু খেলার নিয়ম কানুন তিনি কিছুই জানতেন না। এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসম্ভব জনপ্রিয় ইভেন্টের খেলা। সেটা বুঝতে তাঁর সময় লেগেছে। না জানলে মহা মুশকিলই বটে!
কিভাবে যেনো কাজ হয়ে গেলো তাঁর নতুন জীবনে? দেশীয় সাবেক হ্যান্ডবল-কাবাডি-ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠক রেহেনা পারভীন তাঁকে আবিস্কার করেন। এই রেহেনা ম্যাডাম কুড়িগ্রাম হতে ঢাকার ক্রীড়ামঞ্চে নিয়ে আসেন।
কথা প্রসঙ্গে রেহেনা পারভীন জানান, ‘রাজিয়ার মধ্যে একটা মেধা ও গুণ আছে। ওর প্রবল শক্তি আছে এই অনুবীক্ষণ যন্ত্রে আমি প্রথম জানতে পারি। তাকে পরখ করে দেখেছি। রাজিয়া অন্য দশজনের চেয়ে একদম আলাদা ধাতুতে গড়া। তাকে সহচর্চার সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে ভবিষ্যতে সে অনেক ভালো রেজাল্ট করতে পারবে’।
তাঁর প্রমাণ : উশু প্রতিযোগিতায় ৫৬ কেজি ইভেন্টের ফাইনালে কুড়িগ্রামের রাজিয়া সুলতানা রানী ঐ রাজশাহী বিভাগ তথা বিকেএসপির খেলোয়াড় বিথীকে চমৎকার কৌশলে লড়ে হারিয়ে দ্যান।
ব্যস সোনার পদক তার ঝুলিতে উঠে যায়…আনন্দ দেখে কে? রানী মাত্র ২ সপ্তাহের অনুশীলনীর সময় পেয়েছিলেন। অথচ এই অজানা উশু খেলাকে কিভাবেই না অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করলো–ভাবা যায়!
উশু খেলার নিয়ম জানতেন না যে, কিভাবে খেলতে হয়? তিনি তো প্রমীলা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। যুব গেমসে রংপুর বিভাগের পক্ষে মাঠে নামেন। খেলেছিলেনও বটে! এই প্রমীলা ফুটবল খেলোয়াড় কিনা উশু’র স্বর্ণপদক জয় করে দিয়ে কী বিচিত্র ইতিহাস ঘটিয়ে দিলেন !
সেই ২/৩ বছর কেটে গেছে। উশু ফেডারেশনের কর্মকর্তারা কিনা রানীকে ভুলে গেছেন? কিছু্ই মনে রাখেনি। আজ দেশের মহাদুর্যোগ করোনাভাইরাসের বিরুপ প্রভাব পড়েছে সারাবিশ্বে। এরই মধ্যে রাজিয়া সুলতানা রানী তাঁর দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
না আর্থিক সহযোগিতা। আর না দুস্থ খাবার বিতরনের ব্যবস্থা–উভয় সংকটের মুখে পড়ে গেছেন উশু প্রতিযোগিতার সেরা ক্রীড়াবিদ রানী। সহৃদয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে এগিয়ে আসবেন কী?
উত্তর-জানা নেই…!!
।। অন্যদৃষ্টি ।।
Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com