ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার দাবিতে আমরণ অনশনে মোহন্ত পরমহংস

অন্যদৃষ্টি অনলাইন
মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন
ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার দাবিতে আমরণ অনশনে মোহন্ত পরমহংস

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার তপস্বী ছাউনির মোহন্ত পরমহংস দাশ আমরণ অনশন শুরু করেছেন।

সোমবার থেকে পরমহংস দাস আমরণ অনশনের মধ্য দিয়ে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করার দাবি করেছেন।

শুধু তাই নয়, পরমহংস দাস মুসলিমদের পাকিস্তান ও বাংলাদেশে পাঠানো এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

মোহন্ত পরমহংস দাস এরআগে রাম জন্মভূমি ইস্যুতে অনেকদিন অনশন করেছিলেন। গত (শনিবার) গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোহন্ত পরমহংস দাস বলেন, যখন ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভক্ত হয়েছিল এবং পাকিস্তানকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তাহলে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণায় আপত্তি কেন? যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ না হয় তাহলে দেশভাগের কোন যৌক্তিকতা নেই। পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ভারতে একীভূত করে অখণ্ড ভারতের ঘোষণা করা উচিত।

তার দাবি, দেশে যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা বেশি সেখানে হিন্দুদের হয়রানি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে যাদের সন্ত্রাসী ও জিহাদী মানসিকতা রয়েছে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা উচিত। দেশকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’হিসেবে ঘোষণা করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে যত হিন্দু আছে তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনা উচিত। এবং এখান থেকে মুসলিমদের পাকিস্তান ও বাংলাদেশে পাঠানো হোক।

এর আগে, হিন্দু মহাসভা কর্তৃক ‘হিন্দু রত্ন’ সম্মানে ভূষিত হওয়ার পরে, মোহন্ত পরমহংস দাশ বলেছিলেন, ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ঘোষণা করা এবং ভারতকে ইসলামমুক্ত করা তার লক্ষ্য।

পরমহংস দাস উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বাসিন্দা। তিনি তপস্বী ছাউনির মোহন্ত। তিনি সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিতর্কিত বিবৃতি দিয়ে প্রায়ই আলোচনায় এসেছেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে রাম জন্মভূমি ইস্যুতে কিছুদিন আমরণ  অনশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ফল হয়নি। এরপরে পুলিশ অনশনের সপ্তম দিনে অসুস্থতার কথা বলে তাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। যেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাকে বাসায় ডেকে ফলের রস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করিয়েছিলেন।

এরপরে, পরমহংস দাশ তপস্বী ছাউনি মন্দিরে বাবরের মতাদর্শ ধ্বংস মহাযজ্ঞ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টায় নিজে চিতা তৈরি করে আত্মদাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ পরমহংস দাশ আত্মদাহ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’দিন আগে পরমহংস দাশকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তাকে মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে পেশ করা হয়। সেখান থেকে সিজেএম তাকে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় রিমান্ডে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংস্থা ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’র  সাধারণ সম্পাদক ছোটোন দাস আজ (সোমবার) রেডিও তেহরানকে  বলেন, ‘এটা একটি আরএসএস সঙ্ঘ পরিবারের কৌশলগত কর্মসূচি। বিজেপি ভীষণভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে লকডাউনে কমপক্ষে ১৪ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছে। আরএসএস ও বিজেপি দলিত  বিরোধী। একের পর এক দলিতদের উপরে নির্যাতন, গণধর্ষণ হচ্ছে। সারা দেশ জুড়ে বিজেপি’র বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ, সেই ক্ষোভকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এটা আরএসএস-বিজেপি ও মোদিদের ঘৃণ্য কৌশল মাত্র। ধর্মকে তারা বরাবরই ব্যবহার করেছে।’

ছোটোন দাস আরও বলেন, ‘কোনও সাধু-সন্তের এ ধরণের দাবি হতে পারে না। ধর্মীয় মানুষ, তারা ধর্মাচরণ করবেন, তারা মানুষের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করবেন। আগে মানুষ, তারপরে তো ধর্ম। নাগরিকত্ব আইন ইত্যাদি হল রাজনীতির বিষয়। সাধু-সন্তদের কাজ তো রাজনীতির বিষয়ে মাথা ঘামানো নয়। এটা একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতে সাধুকে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন যোগী আদিত্যনাথ। উনি সাধু নন। একেবারে আগাগোড়া রাজনীতিবিদ।’

‘এটা আসলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। সাধুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং বিজেপি’র ঘৃণ্য রাজনীতির স্বার্থে সাধুরা ব্যবহৃত হচ্ছেন’ বলেও ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক ছোটোন দাস মন্তব্য করেন। সূত্র : পার্সটুডে

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com