প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। তখন মেঘনা ও খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদীর মোহনা জনবিরল বিশাল চরাঞ্চল। সময়ে সময়ে এখানে আগমন ঘটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহান কিছু ধর্মসাধকের।
বলা হয়, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটেছে এই এলাকাকে কেন্দ্র করে। রহস্যঘেরা স্থাপনা জিনের মসজিদ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ, যা আনুমানিক ১৮ শ’ শতকের শেষার্ধে নির্মিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক এই মসজিদটি রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮০০ থেকে ৯০০ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্ল্যাহ সড়কের দক্ষিণ দিকে দেনায়েতপুর গ্রামে অবস্থিত।
মসজিদটি এলাকায় ‘মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেবের মসজিদ’ বলেও পরিচিত। তবে মসজিদের সামনে সিঁড়ির কাছে লাগানো শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদের নাম ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’।
জানা গেছে, ওই সময় রায়পুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আবদুল্লাহ। সময়টি ছিল বাংলা ১২২৫ সাল। ইংরেজি ১৮২৮ সাল। প্রচীন ধার্মিক পরিবারে জন্ম নেয়। আবদুল্লাহ নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৮৬৭-১৮৬৮ সালে উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষালাভের উদ্দেশে ভারতে পাড়ি জমান। ভারতে পড়ালেখা শেষে বাংলাদেশে ফেরার পথে তিনি কিছুদিন দিল্লিতে অবস্থান করেন। দিল্লিতে অবস্থানকালীন তিনি দিল্লি শাহি জামে মসজিদের অনুরূপ একটি মসজিদ বাংলাদেশে নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। পরে দেশে ফিরে ১৮৮৮ সালে তিনি মসজিদের কাজ শুরু করেন।
তিনি দিল্লির শাহি জামে মসজিদের অনুরূপ নকশায় ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৭০ ফুট প্রস্থ তিনটি গম্বুজবিশিষ্ট বিখ্যাত এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মসজিদের তলদেশে ২০ ফুট নিচে রয়েছে তিন কামরাবিশিষ্ট গোপন ইবাদতখানা। নির্জন পরিবেশে সেখানে বসে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন মাওলানা আবদুল্লাহ। মসজিদটির ভিটির উচ্চতা ১৫ ফুট। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। দেয়ালের প্রস্থ আট ফুট। মসজিদের সম্মুখের জরাজীর্ণ মিনারটির উচ্চতা ২৫ ফুট।
কথিত আছে, অতি স্বল্প সময়ে বিশেষ ডিজাইনের এ মসজিদটি নির্মাণের ফলে এটিকে জিনের মসজিদ বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে সামনে দিঘি ও পাশে দিঘি কাটা, ইট তৈরি সাধ্যের অতীত ছিল। মসজিদটি নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে ‘অসংখ্য জিন রাতের আঁধারে মসজিদটি নির্মাণ করেছে।
নির্মাণের পর ক’বছর জিনেরা ওই মসজিদে ইবাদতও করেছে। গভীর রাতে তাদের জিকিরের আওয়াজ ভেসে আসত। বলা হতো, মসজিদটি তৈরিতে টাকার জোগান দিয়েছে জিন।’ নির্জন পরিবেশে সেখানে বসে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন মৌলভী আবদুল্লাহ। কথিত আছে, মৌলভী আবদুল্লাহর কিছু জিন শিষ্য রাতে মসজিদটির গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করত। তাই এই ঐতিহাসিক মসজিদটি জিনের মসজিদ নামে ব্যাপক পরিচিত।