আবদুল মান্নান (এম.এ, এল.এল.বি)।।
মহামারীতে সমষ্টি বা ব্যক্তিগতভাবে আজান দেওয়ার শরয়ী কি বিধান? কেউ সমবেত ভাবে রাত দশটায় আজান দেওয়ার কথা বলেন। তা শরয়ীতের দৃষ্টিতে কতটুটু সঠিক?
মনে রাখবেন ; মুস্তাহাব, সুন্নাত ইত্যাদি হাদিস দ্বারা প্ৰমানিত হওয়া আবশ্যক। কোন ফতোয়ার কিতাবের এবারত,কোন হাদিসের শরহের এবারত কিংবা কোন বড় আলেমের মতামত ইত্যাদি দ্বারা মুস্তাহাব প্ৰমাণিত হয়না। কেবল রাসুল(সা:) এর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতি দিয়ে মুস্তাহাব প্ৰমাণিত হয়।
যদি হাদিস দ্বারা প্ৰমানিত হয় তাহলে মুস্তাহাব। হাদিস দ্বারা প্ৰমানিত না হলে তাহলে বিদআত।
এখন জেনে নেব , হাদিসের আলোকে কোথায় ও কখন আজান দেওয়ার বিধান বিদ্যমান।
হাদিসের আলোকে আজান দেওয়ার স্থানসমূহ হলো:
১_ফরজ নামাজের আজান দেওয়া সুন্নাত।
২_তাহাজ্জুদের আজান হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
৩_ নবজাতকের ডান ও বাম কানে আজান দেওয়া সুন্নাত।
৪_জঙ্গলে যখন ভয় পেলে ভয় নিবারণের জন্য আজান দেওয়া সুন্নাত।
রাসুল (সা:) বলেন ;
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي صَعْصَعَةَ، عَنْ أَبِيهِ، وَكَانَ أَبُوهُ فِي حِجْرِ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ لِي أَبُو سَعِيدٍ: إِذَا كُنْتَ فِي الْبَوَادِي، فَارْفَعْ صَوْتَكَ بِالْأَذَانِ، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا يَسْمَعُهُ جِنٌّ، وَلَا إِنْسٌ، وَلَا شَجَرٌ، وَلَا حَجَرٌ، إِلَّا شَهِدَ لَهُ
অৰ্থাৎ; আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবি সা‘সায়া তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা আবু সায়ীদের কোলে ছিল তিনি বলেন, আমাকে আবু সায়ীদ বলল,
যখন তুমি জঙ্গলে থাকবে তখন তোমার আওয়াজ আযান দ্বারা উচুঁ কর। কেননা, আমি রাসূল(সা:) কে বলতে শুনেছি, তা(আজান) যে কোনো জিন, মানুষ ও পাথর শুনবে তবে তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। ( ইবনে মাজাহ_ ৭২৩।
বাজ্জাজ বর্ণনা করেন ;
عَنْ سَعْدٍ، قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا تَغَوَّلَتْ لَنَا الْغُولُ، أَوْ إِذَا رَأَيْنَا الْغُولَ نُنَادِي بِالْأَذَانِ
অৰ্থাৎ ; হযরত সাদ (রা.) বলেন, আমাদেরকে রাসূল (সা.) যখন কোনো ভূত দেখলে বা পেশ হলে আযান দেওয়ার জন্য বলেন। (বাজ্জাজ_: ১২৪৭)।
৫_কোনো ঘরে জিনেৰ সমস্যা দেখা দিলে:
বায়হাকী শুআবুল ঈমানে লিখেন,
عَنْ مَالِك، قَالَ: اسْتُعْمِلَ زَيْدُ بْنُ أَسْلِمَ عَلَى مَعْدِنِ بَنِي سُلَيْمٍ وَكَانَ مَعْدِنًا لَا يَزَالُ يُصَابُ فِيهِ الْإِنْسَانُ مِنْ قِبَلِ الْجِنِّ، فَشَكَوْا ذَلِكَ إِلَى زَيْدِ بْنِ أَسْلِمَ: ” فَأَمَرَهُمْ بِالْأَذَانِ، وَأَنْ يَرْفَعُوا بِهِ أَصْوَاتَهُمْ، فَفَعَلُوا فَانْقَطَعَ ذَلِكَ عَنْهُمْ ” فَهُمْ عَلَيْهِ حَتَّى الْيَوْمِ ”
অৰ্থাৎ ; হযরত মালিক বলেন, জায়দ ইবনে আসলামকে বনী সুলাইরে খনিতে দায়িত্ব দেওয়া হলো। তা এমন খনি ছিল যাতে মানুষ জিন দ্বারা আক্রান্ত হত। তখন তারা জায়দের নিকট অভিযোগ করল। তখন তিনি তাদেরকে উচু স্বরে আজান দিতে বলেন। তারা যখন তা করল জিনের আছর বন্ধ হলো। অতঃপর তারা নিরপদ হলো।” (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদিছ নং: ২৭৮৮)।
◇ সুতরাং; উল্লিখিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে আযান দেওয়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। অৰ্থাৎ মহামারিতে আজান দেওয়া হাদিস দ্বারা প্ৰমানিত নয়।
♧ হযরত রশিদ আহমদ গাগুহী(রা:) বলেন,
طاعون’ وبا وغیرہ امراض کے شیوع کے وقت کوئی خاص نماز احادیث سے ثابت نہیں ہے، نہ اس وقت اذانین کہنا کسی احادیث میں وارد ہوا ہے، اس لے اذان کو یا جماعت کو ان موقعوں میں ثواب یا مسنون یا مستحب سمجھنا خلاف واقع ہے ۔ ( فتاوی رشیدیہ۔کتاب العلم)
অৰ্থাৎ ; প্লেগ ও মহামারি ইত্যাদি রোগের প্ৰাদূৰ্ভাবের সময় কোন বিশেষ নামাজ হাদিস দ্বারা প্ৰমানিত নহে। এ সময় আজান দেওয়ার কথা কোন হাদিসে বৰ্ণিত হয়নি। সুতরাং এ ধরণের পরিস্থিতিতে আজান ও জামাআত কে সাওয়াবের কাজ বা সুন্নাত বা মুস্তাহাব মনে করা বাস্তবতা পরিপন্থী।( ফতোয়ায়ে রশিদিয়া)
♧ পাকিস্তানের প্ৰখ্যাত ইসলামী স্কলার মাও:ইলিয়াছ জুম্মান(দা:বা:) কিছু দিন পূৰ্বে এ বিষয়ে এক আলোচনায় বলেন, কোন উবা(মহামারি) এর ক্ষেত্ৰে আজান সুন্নাহ দ্বারা প্ৰমানিত নয়।
মহামারী দুর করার উপায় হলো; জনসমাগম থেকে দুরে থাকা: যেমন, কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, আইসোলেশন হাদিস দ্বারা প্ৰমানিত। তাওবা করে নামাজ পড়া, নামাজের পর চারকুল ও আয়াতুল কুরসী পড়া, নফল রোজা রাখা, সদকা করা, সমাগম থেকে দূরে থাকা ও বিভিন্ন তাসবীহ পড়া। যেমন, ইসতিগফার, দুরূদ, দোয়ায়ে ইউনুস, দোয়ায়ে তাওয়াক্কুল ইত্যাদি পড়া।
♧ ইমাম শাফেয়ী বলেন; মহামারী দূর করার সবচেয়ে প্রভাবশালী আমল হলো দোয়ায়ে ইউনুসের তাসবীহ ও দূরূদ পাঠ করা। তাই তাওবা করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বেশি বেশি তাসবীহ ও দুরূদ পাঠ করুন। (তাফসীরে রুহুল বয়ান, খ. ১, পৃ. ১৪৬)।
♧ হযরত আমৰর ইবনুল আস (রা) এর শাসনামলে সিরিয়ায়(শাম) প্লেগ মহামাৰী প্ৰকট আকার ধারণ করলে তিনি সিরিয়া বাসিকে হাদিস অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইন(সঙ্গ ত্যাগ) করতে নিৰ্দেশ দিয়েছিলন।ফলে তারা মহামারি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এ রকম আজান দেওয়ার কথা পাওয়া যায়নি।
ফরজ নামাজের আজানের পর পর মহামারী দূর হওয়ার জন্য স্পেশাল দোয়া করা যেতে পারে।কারণ তখন দোয়া কবুল হওয়ার সময়।
তাবরানী বর্ণনা করেন;
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِذَا نُودِيَ بِالْأَذَانِ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَاسْتُجِيبَ الدُّعَاء
অৰ্থাৎ; রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন আযান দেওয়া হয় তখন আসমানের দরজা খোলা হয় এবং দোয়া কবুল হয়। (তাবরানী, আদ দোয়া, হাদিছ নং: ১৬৭)।
তাবরানী আল মুজামুল কবীরে লিখেন,
عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّمَا قَوْمٍ نُودِيَ فِيهِمْ بِالْأَذَانِ صَبَاحًا إِلَّا كَانُوا فِي أَمَانِ اللهِ حَتَّى يُمْسُوا، وَأَيُّمَا قَوْمٍ نُودِيَ عَلَيْهِمْ بِالْأَذَانِ مَسَاءً إِلَّا كَانُوا فِي أَمَانِ اللهِ حَتَّى يُصْبِحُوا
“হযরত মাকল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, যে কোনো জাতির মাঝে সকালে আযান দেওয়া হলে তারা বিকেল পর্যন্ত আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকবে আর যে জাতির মাঝে বিকেলে আযান দেওয়া হবে তারা সকাল পর্যন্ত আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকবে।” (তাবরানী, আল মুজামুল কবীর, হাদিছ নং: ৪৯৮)।
সৰ্বোপরি মহামারি থেকে মুক্তির আমল যা রাসুল (সা:) শিক্ষা দিয়েছেন;
اللهم اني اعوذ بك من البرص والجنون والجذام ومن سيي الاسقام. ابو داود.
এই দোয়া বেশি বেশি করে পড়ুন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহামারি থেকে নিরাপদ রাখুন।(আমিন)