বয়সজনিত হাঁটু ব্যথায় করণীয়

অন্যদৃষ্টি অনলাইন
রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১২ অপরাহ্ন

ডা. মো. রাসেল রানা ও ডা. মো. গাউসুল আযম।।

হাঁটু ব্যথা বা ফুলে যাওয়া বা হাঁটুর প্রদাহ মানেই কি আর্থ্রাইটিস? আসলে আর্থ্রাইটিস একক কোনো রোগ নয়। ২০১৩ ও ২০১৬ সালে আলাদাভাবে পরিচালিত দুটি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে আর্থ্রাইটিসের ১০০টিরও বেশি ধরন রয়েছে বলে দাবি করেন গবেষকরা।

জার্নাল অব দি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী শুধু আমেরিকাতেই ১০ মিলিয়নের বেশি আর্থ্রাইটিসের রোগী রয়েছেন। জয়েন্টের ব্যথা আর তার ধরন অনুসারে আর্থ্রাইটিসের নামকরণ করা হয়ে থাকে, যেমন- অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট, সংক্রমণজনিত আর্থ্রাইটিস, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি।

ন্যাশনাল হেলথ সোসাইটি আ্যানকাইলজিং স্পন্ডাইলাইটিস, সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস, ফিবরোমাইলজিয়ার মতো কন্ডিশনগুলোকেও আর্র্থ্রাইটিসের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। আমেরিকায় প্রতিবন্ধিতার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে আর্থ্রাইটিসকে দায়ী করা হয়। শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধ সবাই তাদের জীবদ্দশায় এ রোগের শিকার হতে পারেন; তবে পুরুষের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা চারগুণ বেশি।

রোগ, কারণ ও প্রতিকার : ১. স্বাভাবিক হাঁটু (Stage-I) : কোনো ব্যথা বা অন্যান্য সমস্যা হয় না। ২. সামান্য বাত (Stage-II or Minor osteoarthritis) : খুব সামান্য নতুন সুচালো হাড় গজায়, জয়েন্ট স্পেস (ফাঁকা জায়গা) কমতে থাকে এবং কার্টিলেজের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমে যায়। এই স্টেজে হাঁটুতে কোনো ব্যথা হয় না।

চিকিৎসা : ফিজিওথেরাপি এবং জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা (যেমন ওজন কমানো, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া ইত্যাদি), যাতে বাতজনিত পরিবর্তন দ্রুত খারাপের দিকে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ওষুধ বা ইঞ্জেকশনের কোনো প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে বারবার আঘাত থেকে জয়েন্টকে রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ফিজিওথেরাপি সেশন নিয়ে মোটামুটি ১০ শতাংশও যদি উপকার পাওয়া যায়, তবুও সেটা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যেতে হবে।

৩. মৃদু বাত (Stage-III or Mild osteoarthritis) : উপরের লক্ষণগুলো আরও একটু বেশি হবে, হাঁটুর মুভমেন্ট কমে যাবে (Joint stiffness), বিশেষ করে সকালে; অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা, সিঁড়িতে ওঠানামা করে, ওজন বহন করা এবং হাঁটু ভাঁজ করে কাজ করতে গেলে ব্যথা অনুভব হবে। চিকিৎসা : ফিজিওথেরাপি এবং জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা। খুব বেশি ব্যথা বা প্রয়োজন না হলে ওষুধ বা ইঞ্জেকশনের দরকার নেই।

৪. মাঝারি রকমের বাত (Stage-iv or Moderate osteoarthritis) : উপরোক্ত সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। ঘন ঘন ব্যথা হয় এবং ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে, সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বা জয়েন্টের রস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জয়েন্ট ফুলে যেতে পারে। চিকিৎসা : উপরোক্ত চিকিৎসা। অনেক সময় অনেকে সার্জারির দিকে যান, কিন্ত এর দীর্ঘমেয়াদি কোনো উপকারিতা নেই, বরং এটা নানা উপসর্গ তৈরি করে।

৫. তীব্র রকমের বাত (Stage-v or Severe osteoarthritis) : উপরোক্ত লক্ষণগুলো আরও বাড়তে থাকে এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা আরও অনেক কমে যায়। ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি কার্টিলেজ নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসা : উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং ওষুধ বা ইঞ্জেকশন নিতে হবে। যদি একান্তই ব্যথা ও অন্যান্য সমস্যা কমানো না যায় তবে সার্জারির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সার্জারির পরও সঠিক পুনর্বাসনের জন্য ফিজিওথেরাপি নিতে হবে।

হাঁটুর বয়স্কজনিত বাতের জন্য ফিজিওথেরাপি সব থেকে উন্নত ও উপকারী চিকিৎসা। এর কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই।

ডা. মো. রাসেল রানা : ডক্টর অব ফিজিক্যাল থেরাপি (ফিজিওথেরাপি), নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র ও ডা. মো. গাউসুল আযম : পিটি লেখক ও ফিজিওথেরাপিস্ট, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com