নওগাঁয় বৃদ্ধ বাবাকে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে সন্তানরা

আর আর চৌধুরী, নওগাঁ
সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০, ১০:২৪ অপরাহ্ন
নওগাঁয় বৃদ্ধ বাবাকে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে সন্তানরা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শড়িয়া গ্রামের মজিবর ফকিরের সম্পত্তি লিখে নিয়ে পাগল বানিয়ে সন্তানরা পায়ে দঁড়ি দিয়ে বেধে রেখেছে।

গ্রামের লোকজনের কাছে বৃদ্ধটি মজি ফকির হিসেবেই পরিচিত। প্রয়োজন মাফিক খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা-যত্ন না পাওয়ায় ইতিমধ্যেই মজিবর ফকির অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।

লোক দেখলেই বলে খাবার দে হামাক খাবার দে। খোলা কুঁড়ে ঘরের পাশে টয়লেট সংলগ্ন একটি চকিতে এক পায়ে দঁড়িতে বেধে রাখা হয়েছে বৃদ্ধ মজিবরকে।

স্থানিয় সুত্রে জানা যায়, শড়িয়া গ্রামের মৃত-বয়তুল্লাহ ফকিরের ছেলে মজিবর ফকির। বয়স ৭৮ বছর। মাত্র ২ বছর আগেও স্বাভাবিক ছিলেন মজিবর।

তখন ছেলেদের মাঝে কিছু সম্পত্তি লিখে দেন। এরপর কৌশল করে বড় ছেলে আব্দুল খালেক বসবাড়ি সহ অবশিষ্ট সম্পত্তির অধিকাংশ সম্পত্তি লিখে নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন মজিবর ফকির। এক পর্যায়ে রাস্তায় বের হয়ে অস্বাভাবিক আচরন করা, দোকানে গিয়ে বিভিন্ন খাবার জিনিসপত্র খাওয়া সহ নানা রকমের পাগলামী আচরন শুরু করেন মজিবর।

তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে কোন রকমের চিকিৎসা না করেই প্রায় ১ বছর যাবত মজিবরের পায়ে দঁড়ি লাগিয়ে একটি নোংরা খোলা কুঁড়ে ঘরে বেধে রেখেছে তার সন্তানরা। মজিবরের ছোট স্ত্রী ও আশেপাশের লোকের দাবী সম্পত্তি লিখে নেওয়া ও দীর্ঘদিন যাবত প্রয়োজন মাফিক খাবার সহ সুচিকিৎসা, সেবা-যত্ন না পাওয়ার কারণে দিন দিন মজিবর মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলে ৩ বেলা যে পরিমাণ খাবার দেয় তাতে মজিবরের ক্ষুধা নিবারন হয় না। এই কারণে যে মানুষই তার কাছে যায় মজিবর তার কাছেই খাবার চান। অভাবের সংসার হওয়ার কারণে মজিবরের ছোট স্ত্রীকে অধিকাংশ সময় মেয়েদের বাড়িতে থাকতে হয়। তখন মজিবরকে দেখার কেউ থাকে না। ওই কুড়ে ঘরেই তাকে মশার কামড়ে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে থাকতে হয়। অসহায় ভাবে পেট ভরে খেতে না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বৃদ্ধ মজিবর ফকির।

স্থানীয়রা আরো জানান, সুচিকিৎসা সহ সেবা যত্ন ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও মুক্ত পরিবেশ পেলে বৃদ্ধ মজিবর সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারেন ধারনা। মজিবরকে একবার খাবার দিলে আবার খাবার চায়। কিন্তু সন্তানরা মজিবরের

সম্পত্তি লিখে নিয়ে এখন আর বাপকে ভালো ভাবে দেখে না বা ঠিকমত খাবারও দেন না, বাপের অত্যাচারে

অতিষ্ঠ হয়ে সন্তানরা তাই বৃদ্ধ বাপকে দড়ি দিয়ে বেধে রেখেছে।

বিষয়টি খুবই মানবিক বলেই জানিয়েছেন স্থানিয়রা।মজিবরের বড় ছেলে আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, স্বজ্ঞান থাকা কালেই বাপ আমাদেরকে সম্পত্তি দিয়েছেন। আমি বাপকে তিন বেলা খাবার দিই। তবে তার কোন চিকিৎসা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। অস্বাভাবিক আচরন করার কারণে পায়ে দড়ি দিয়ে বেধে রেখেছি।

মজিবরের দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন বড় ছেলে বসতবাড়িসহ বেশি সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর থেকে স্বামীর মাথার সমস্যা দেখা দেয়। অভাবের সংসার। তাই আমাকে মেয়ে-জামাইয়ের উপর নির্ভর হয়ে থাকতে হয়। আমি যতটুকু পারি সেবাযত্ন করার চেস্টা করি। আর টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। চিকিৎসা, ভালো সেবা-যত্ন, পর্যাপ্ত খাবার পেলে হয়তো আমার স্বামী ভালোও হতে পারেন।

একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল লতিফ বলেন বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। আমি খোজখবর নিয়ে তার জন্য স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন কিছু করার সুযোগ থাকে অবশ্যই তা করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ইতিপূর্বেও আমরা এরকম একাধিক ব্যক্তিকে সরকারি সহায়তা দিয়েছি। মজিবর ফকিরের ব্যাপারেও খোজখবর নিয়ে দ্রুত তার জন্য কিছু করার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও করার চেস্টা করবো।

সুচিকিৎসা, সেবা-যত্ন, পর্যাপ্ত খাবার পেলে হয়তো বা বৃদ্ধ মজিবর স্বাভাবিক জীবনে আবার ফিরে আসতে পারে এমনটিই ধারনা স্থানীয়দের।

Facebook Comments
Print Friendly, PDF & Email
সংবাদটি শেয়ার করুন


আরো সংবাদ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com