আবদুল মান্নান (এম এ_এল এল বি)।।
চলমান বিশ্বের আতংকের নাম Covid-19 বা নোবল করোনা ভাইরাস। Latin term(শব্দ) Corona অৰ্থ মুকূট। যেহেতু এই ভাইরাস দেখতে মুকুটের মত।
বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর ১৮৮ দেশে চার লক্ষ প্লাস মানুষ এ ভাইরাসে আক্ৰান্ত হয় ১৯ হাজার প্লাস মারা গেছে। প্ৰতিদিন এই ভাইরাসে আক্ৰান্ত ও মৃত্যুর হার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে!
এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন human being মৃত্যুর আশাংকা করছেন জাতি সংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ইতিমধ্যে WHO ( Would Health Organisation) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর ভয়ংকর পরিণতির দিক বিবেচনা করে Covid-19 কে আন্তৰ্জাতিক মহামারি ঘোষণা করেছে।
তবে দুই পরমাণুশক্তিধর আমেরিকা ও চীন এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পরস্পর Blame Game চালিয়ে যাচ্ছে। সামান্য ইতিহাস সম্পৰ্কে জ্ঞাত লোকদের কাছে তাদের এই ব্লেইম গেইমকে হাস্যকর ও চরম মূৰ্খতার বহি:প্ৰকাশ মনে হয়।
কারণ আধুনিক মেডিকেল বিজ্ঞানীগণ বলেন,CoronaVirus এর উপসৰ্গ হল জ্বর, সৰ্দী ও কাশি। আর এই ভাইরাস তিন ভাগে বিভক্ত। সবচেয়ে ভয়ংকর ও প্ৰাণঘাতি হলো COVID-19 যা Nobel CoronaVirus।
ইতিহাস ও রাসুল(সা:) এর বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিস পৰ্যালোচনা করলে এই অভিন্ন উপসৰ্গের আরো একটি রোগের অস্তিত্বের প্ৰমাণ পাওয়া যায়। যে রোগের নাম প্লেগ( الطاعون)। করোনা ভাইরাসের মত সেই প্লেগ মহামারিকে মেডিকেল বিজ্ঞানীরা তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন।
তাছাড়া আজ করোনা ভাইরসস থেকে মুক্তির জন্য যে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার জন্য পৃথিবী ব্যাপী লকডাউন ও আইসোলেশনে জোর বা বাধ্যা করা হচ্ছে ; সেই মহামারি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাসুল(সা:) কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গ ত্যাগের নিৰ্দেশ দিয়েছিলেন।
প্ৰসিদ্ধ হাদিস গ্ৰন্থ বুখারি শরীফে বৰ্ণিত নিম্নোক্ত হাদিসের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে সবার জ্ঞান চক্ষু উন্মোচিত হয়।
বিশ্ব নবী মুহাম্মদ(সা:) বলেন ;
عن يحي بن يعمر عن عائشة (رضي الله عنها) زوج النبي (صلي الله عليه وسلم )؛ أنها أخبرتنا أنها سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم؛ عن الطاعون- فاخبرها نبي الله عليه وسلم- أنه كان عزابا يبعثه الله علي من يشاء فجعله الله رحمة للمؤمنين.
فليس من عبد يقع الطاعون فيمكث في بلده صابرا يعلم أنه “لن يصيبه إلا ما كتب الله له إلا كان له مثل أجر الشهيد. رواه البخاري في الطب.
অৰ্থাৎ হযরত আয়েশা(রা:) হতে বৰ্ণিত; তিনি রাসুল(সা:) কে তাউন( প্লেগ রোগ) সম্পৰ্কে জিজ্ঞেস করেন। রাসুল(সা:)তাকে এই প্ৰশ্নের উত্তরে বলেন; প্লেগ মহামারি আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে শাস্তি। আল্লাহ যাদের উপর(শাস্তির ইচ্ছা করেন এই মহামারি প্লেগ প্ৰেরণ করেন। আর এই মহামারি প্লেগ ঈমানদারদের জন্য বিশেষ রহমত।
অতপর আল্লাহর কোন বান্দাহ প্লেগে আক্ৰান্ত হলে ধৈৰ্য্য সহকারে নিজের দেশ/এলাকায় অবস্থান করে; এই বিশ্বাসে যে তার তাকদিরে যা লিপিবদ্ধ আছে তাই সংঘটিত হবে। তখন সে শহীদের মৰ্য্যাদা লাভ করবে।( বুখারি: হাদিস- ৫৭৩৪)
এই হাদিস প্ৰমাণ করে যে , আজকের করোনা ভাইরাস মানব সৃষ্ট কোন রাসায়নিক দ্ৰব্য নয়। এটি আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে অবাধ্য মানব জাতিকে শিক্ষা দেওয়ার শাস্তি। যা ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন আকৃতি ধারণ করে অবাধ্য মানব জাতির জন্য আকাশ থেকে প্ৰেরণ করেন। পৃথিৱী ব্যাপী আক্ৰান্ত আজকেৰ Covid-19 বা করোনা ভাইরাস আল্লাহ পাকের সেই শাস্তির ধারাবাহিকতা মাত্ৰ।
ইতালির প্ৰধানমন্ত্ৰী জুসেপ্পা কান্তে সম্প্ৰতি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যৰ্থ হয়ে চরম হতাশার টূইট করে এর সত্যতাকে আরো প্ৰতিষ্ঠিত করে। তিনি বলেন; আমরা সমস্ত নিয়ন্ত্ৰণ হারেয়ি ফেলেছি।আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি।পৃথিবীর সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে। এখন একমাত্ৰ সমাধান আকাশের কাছে।
উক্ত হাদিসে নবী মুহাম্মদ(সা:) যে প্লেগ মহামারির কথা বলেছেন সেটি আজকেরCovid-19 বা নোবেল করোনা ভাইরাসেৰ জিরক্স কপি। আজ্কের করোনা ভাইরাসের মত প্লেগের উপসৰ্গ ছিল জ্বর, সৰ্দী ও কাশি।
অন্যদিকে এ সমস্ত মহামারিতে আক্ৰান্ত হলে সেই এলাকা ত্যাগ না করে ধৈৰ্য্য ধারণ করে আক্ৰান্ত এলাকায় অবস্থানের নিৰ্দেশ দেন বিশ্ব নবী(সা:)।যেখান থেকে আজকের যুগের কোয়ারেন্টাইন এর উদ্ভাবন।
এই কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি অবলম্বন করে মহামারি থেকে পরিত্ৰাণ পেয়েছিলেন সিরিয়াবাসি। আমর ইবনুল আস(রা:) এর শাসনামলে প্লেগ মহামারি আক্ৰান্ত হলে তিনি সিরিয়ার সবাইকে কোয়ারেন্টাইন এ যাওয়ার নিৰ্দেশ দিয়েছিলেন।
এক নিবন্ধে এ বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করেছি।{যেহেতু মেডিকেল বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাস এর ঔষধ আবিষ্কার হয়নি। কোয়ারেন্টাইন কাৰ্যকরি মেডিসিন}
কোয়ারেন্টাইন সম্পৰ্কে রাসুল(সা:) এর আরো কিছু হাদিস থেকে সম্যক ধারণা পাই।
রাসুল(সা:) বলেন;
اذا سمعتم الطاعون بأرض فلا تدخلوها واذا وقع بأرض وانتم بها فلا تخرجوا منها.( رواه البخاري ومسلم )
অৰ্থাৎ; যখন তোমরা কোন জায়গায় প্লেগ রোগের খবর শুনবে; তখন সেই জায়গায় প্ৰবেশ করনা। আর যখন তুমি যে জায়গায় বসবাস কর সেখানে প্লেগ রোগ হয়; তাহলে সেখান থেকে তুমি বের হয়োনা।
{বুখারী-৫৭২৮,৬৯০৪ : মুসলিম-২২১৮}
রাসুল(সা:) এ ধরণের সংক্ৰমক রোগ থেকে দূরে, এর ভয়াল পরিণতি এবং আক্ৰান্ত ব্যক্তির সঙ্গ ত্যাগ তথা কোয়ারেন্টাইন সম্পৰ্কে অন্য হাদিসে এরশাদ করেন;
وفر من المجزوم كما تفر من الأسد.(رواه البخاري)
অৰ্থাৎ; তুমি কুষ্ঠ রোগ থেকে পালিয়ে যাও যেমনি বাঘ থেকে পালাও।(বুখারি-৫৭০৭)
তিনি(সা:) আরো বলেন ; قال رسول الله-صلى الله عليه وسلم لا يورد ممرض علي صحيح.الحديث
অৰ্থাৎ; ব্যাধিযুক্ত উট পালের মালিক(তার অসুস্থ উট গুলোকে)সুস্থ উট পালের মালিকের (সুস্থ উটের)ধারে কাছে আসবেনা।
এ হাদিস দ্বারা প্ৰমানিত হয় যে, এ ধরনের সংক্ৰামক ব্যাধিতে কেবল মানব জাতি আক্ৰান্ত হয়না। জীব-জন্তু ও আক্ৰান্ত হয় এবং তাদের মাধ্যমে এগুলো চতুৰ্দিকে ছড়িয়ে পড়ে বা সংক্ৰমিত হয়।
উল্লেখিত হাদিস সমূহ থেকে প্ৰমানিত যে,নবী মুহাম্মদ(সা:) হলেন কোয়ারেন্টাইন এর মূল উদ্ভাবক। তিনি আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দ বছর আগে আমাদের সেটি শিক্ষা দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস সহ অন্যান্য মহামারি থেকে মুক্তি লাভেৰ একমাত্ৰ চুড়ান্ত পদ্ধতি বা মেডিসিন হল কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউন। আজকের বিজ্ঞান রাসুল(সা:) প্ৰদৰ্শিত সেই কোয়ারেন্টাইন lock-down সমবেত ভাবে মেনে নিচ্ছে।
সবার উচিত এই মহা ক্ৰান্তিকালে অন্যজন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপন করা,আক্ৰান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা ও তার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা।
এ ধরনের মহামারি মোকাবিলা করার স্পৰ্ধা দেখানো কিছুতেই উচিত নয়।কারণ এ ধরণের করোনা নামীয় মহামারি আল্লাহ পাকের শাস্তি। আল্লাহর আজাবের মোকাবিলার সাধ্য এই দুৰ্বল মানব জাতির নেই ।বরং এর ভয়াল থাবা থেকে পরিত্ৰাণের উদ্দেশ্যে নিজের পাপের প্ৰায়শ্চিত করে আল্লাহ পাকের রহমত ভিক্ষা চাওয়া আবশ্যক।
তদুপরি এর মাধ্যমে তিনি মানবজাতির পরিক্ষা নেন। তাই তিনি কুরআনে বলেন,
ولنبلونكم بشي من الخوف والجوع و نقص من الأموال والأنفس والثمرات ؛ وبشر الصابرين.
অৰ্থাৎ; আমি তোমাদেৰ ভয়, ক্ষুধা,সম্পদ নষ্ট,মানব মৃত্যু এবং ফসলাদি নষ্টের অবশ্যই পরিক্ষা করব। আর ধৈৰ্য্য শীলদের জন্য রয়েছে সূসংবাদ।(আল-কুরআন)
আর যখন আল্লাহর মহামারি নামীয় সেই আজাব পাপিষ্ঠ লোকদের শায়েস্তা করার জন্য জমিনে এসে পৌছে তখন আল্লাহর প্ৰিয় বান্দাহরা ও এর আওতায় চলে আসে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ পাক বলেন;
واتقوا فتنة لاتصيبن اللذين ظلموا خاصة. الآية
অৰ্থাৎ; তোমরা আল্লাহ পাকের সেই ফিতনা বা শাস্তির ভয় কর যা কেবল সীমালঙ্গনকারিদের পাকড়াও করবেনা। (আল-কোৰআন)
যখন আল্লাহ পাকের প্ৰিয় বান্দাহরা সেই শাস্তির আওতায় চলে আসে।তখন আল্লাহ তাদের শাহাদতের মৰ্যাদায় অভিষিক্ত করেন। ৰাসুল(সা:) বলেন,
المطعون شهادة كل مسلم (،رواه البخاري )
অৰ্থাৎ; প্লেগ রোগ/ মহামারি আক্ৰান্ত মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে শাহাদাতের মৰ্যাদা লাভ করবে।(বুখারি:)
{আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন}( اللهم امين)